জল খেয়ে প্লাস্টিকের বোতল ফেলে দেন তো? স্বাভাবিক, বাড়তি আবর্জনা কে আর জমিয়ে রাখে! কিন্তু জানেন কি, এইসব ফেলে দেওয়া বোতল দিয়েই একটা আস্ত দ্বীপ বানিয়ে ফেলেছেন এক ব্যক্তি? “Give Your Trash to me/ For my Floating Island”– অর্থাৎ তোমার কাছে যা আবর্জনা, তাই গড়ে তুলবে আমার ভাসমান দ্বীপ– এই গান গেয়েই নিজের উদ্দেশ্যের কথা বলতেন তিনি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক সে গল্প।
হ্যাঁ, কেবলমাত্র ফেলে দেওয়া খালি প্লাস্টিকের বোতল দিয়েই সমুদ্রের উপরে গড়ে উঠেছে আস্ত একটা দ্বীপ। তাও একবার নয়। বার বার তিনবার বোতল দ্বীপ গড়ে তুলেছেন এই ব্যক্তি। মানুষের তৈরি করা উপদ্রবই হোক, কি ঝড়-তুফানের মতো প্রাকৃতিক সমস্যা, কোনও কিছুই তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। আর অবশেষে সব বাধা পেরিয়ে সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছে মানুষের হাতে গড়া এই দ্বীপ।
আরও শুনুন: দেবর্ষি নারদের বল্কল থেকেই তৈরি ভারকালা সমুদ্রসৈকত, শোনায় পাপমুক্তির কাহিনি
কীভাবে শুরু হয়েছিল এই যাত্রা? তাহলে খুলেই বলা যাক।
নিজস্ব একটি দ্বীপের মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন রিচার্ট সোয়া ওরফে রেইশি। ইউরোপে কিছুদিন ভবঘুরে জীবন কাটিয়ে অবশেষে মেক্সিকোতে এসে থিতু হন তিনি। আর এইখানেই নিজের স্বপ্নপূরণ করবার উদ্যোগ নেন ওই ব্যক্তি। সেটা ১৯৯৬ সাল। জিপোলাট সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি দ্বীপটি গড়ে তুলতে শুরু করেন তিনি। জালের মধ্যে খালি প্লাস্টিকের বোতল পুরে জলে ভাসিয়ে তিনি দ্বীপের কাঠামো তৈরি করেন, যাতে তার উপরে বাঁশ, প্লাইউড ইত্যাদি চাপানো যায়। আর এই সবটার উপরে বালি ফেলে তৈরি হয় বোতল দ্বীপ। রেইশি প্রথম থেকেই চেয়েছিলেন, তাঁর গড়ে তোলা দ্বীপ হবে পরিবেশবান্ধব। সেইমতো দ্বীপে সৌরশক্তি ব্যবহার করার ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই উপকূলের স্থানীয় মানুষেরা এক ভিনদেশিকে মেনে নিতে মোটেও রাজি ছিল না। তাদের বিরোধিতার দরুনই এই দ্বীপ ছেড়ে যেতে হয় রেইশিকে।
আরও শুনুন: মোবাইলের নেশায় বুঁদ গরিলা, আসক্তি কমাতে কালঘাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের
কিন্তু রেইশি তো হাল ছাড়ার মানুষ নন। তাই ১৯৯৮ সালেই দ্বিতীয়বার দ্বীপ গড়ার কাজে হাত দেন তিনি। এবার ক্যারিবিয়ান উপকূলের পুয়ের্তো অ্যাভেঞ্চুরাসের কাছাকাছি। প্রায় আড়াই লক্ষ প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ৬৬ ফুট লম্বা এবং ৫৪ ফুট চওড়া একটি দ্বীপ। দ্বীপে ম্যানগ্রোভ সহ অনেক গাছ বসান রেইশি। নিজের বসবাসের জন্য দ্বীপে একটি দোতলা বাড়িও তৈরি করেন তিনি। এ ছাড়া সৌরচুল্লি আর স্ববিয়োজনের সুবিধাসহ শৌচাগারও ছিল সেখানে। কিন্তু ২০০৫ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া হারিকেন ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় রেইশির সাধের দ্বীপ।
এই ঘটনায় রেইশি প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু হার মানা তো তাঁর ধাতে নেই। ২০০৭ সালের শেষ দিক থেকে ফের দ্বীপ গড়ায় মন দেন তিনি, আগের জায়গার কাছাকাছিই। আগের মতোই গাছগাছালি দিয়ে সাজিয়ে তোলেন এই নতুন দ্বীপটিকেও। নির্মাণ করেন বাড়ি আর দুটি পুকুর। সোলার প্যানেল, সৌরশক্তিচালিত ঝরনা, সমুদ্রের ঢেউয়ের শক্তিতে চালিত ওয়াশিং মেশিন, কী নেই সেখানে! এই দ্বীপটিকে স্বীকৃতি দেয় মেক্সিকো সরকারও। পর্যটকদের জন্যেও খুলে দেওয়া হয় এই দ্বীপ।
দুঃখের কথা এটাই, ঝড়বৃষ্টিতে রীতিমতো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে ২০১৯ সালে এই দ্বীপটিকেও সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন রেইশি। তবে তাঁর পুরনো রেকর্ড বলছে, সুযোগ পেলেই ফের এই কাজে নেমে পড়বেন রিচার্ট সোয়া ওরফে রেইশি।