শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা নিয়ে বিতর্ক উসকে উঠেছিল কর্ণাটকে। সেই আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন এই ছাত্রী। হিজাবের পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন তিনি। আর সম্প্রতি দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় কলা বিভাগে রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করলেন এই তরুণীই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিতর হিজাব পরা যাবে না, এই মর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কর্ণাটকের শিক্ষা দপ্তর। কোনও মুসলিম ছাত্রী এই পোশাক পরে এলে তাঁকে পরীক্ষাও দিতে দেওয়া হবে না, সাফ জানিয়েছিলেন কর্ণাটকের শিক্ষামন্ত্রী। পালটা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন মুসলিম পড়ুয়াদের একাংশ। বিতর্কের জল গড়িয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত পর্যন্ত। তবে রাজ্য সরকার তাদের মতে অনড় ছিল। আর তার জেরেই পড়াশোনা থমকে গিয়েছিল অনেক মুসলিম ছাত্রীর। কারণ মাথা না ঢেকে বাইরে বেরনোর কথায় তাঁরা সম্মত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন এই ছাত্রীও। হিজাব বিতর্কের জেরে স্কুলে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। অবশেষে মা-বাবার কথা শুনে তিনি ফের পড়াশোনা শুরু করেন। আর এবার দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় গোটা রাজ্যের মধ্যে কলা বিভাগে প্রথম হলেন ১৭ বছরের এই তরুণী।
আরও শুনুন: ধর্ষণের দায়ে জেলবন্দি ছেলে, নির্যাতিতার সন্তানের কাস্টডি চাইলেন ধর্ষকের মা-বাবা
তবাসুম শেখ নামের ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, মুসলিম মেয়েরা হিজাব পরবে কি পরবে না, সে বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপকে তিনি একেবারেই সমর্থন করেন না। বরং কোনও ধর্মনিরপেক্ষ দেশে এ ধরনের নিয়ম জারি করাকে অযৌক্তিক বলেই মনে করেন তিনি। কর্ণাটকের এই তরুণী জানিয়েছেন, ৫ বছর বয়স থেকেই তিনি হিজাব পরে আসছেন। একে নিজের এবং নিজের ধর্মের অবিচ্ছিন্ন অংশ বলে মনে করেন তিনি। ফলে হিজাব ছাড়া থাকার কথা তিনি ভাবতেই পারেন না। সেই কারণেই সরকারের এহেন নিষেধাজ্ঞার পর আরও অনেক বন্ধুর মতোই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন এই তরুণী। কিন্তু তাঁর মা-বাবার মত ছিল উলটো। হিজাবপন্থী হলেও, পড়াশোনাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন তাঁরা। এমনকি তাঁরা এ কথাও বলেন যে, এই নির্দেশ আসলে মুসলিম মেয়েদের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার ফাঁদ। বরং পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হলে এহেন অন্যায্য কাজের প্রতিবাদ করতে পারবেন ওই ছাত্রী, এমনটাই বুঝিয়েছিলেন তাঁর মা-বাবা। সেই কথায় রাজি হয়েই ফের স্কুলে যাওয়া শুরু করেন তবাসুম। যদিও হিজাব ছাড়া থাকতে তাঁর অস্বস্তি হত, একে পাপ বলেও মনে করতেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেননি তিনি, আর এবার তারই ফল মিলেছে। এরপর মনস্তত্ত্ব বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চান ওই তরুণী, এমনকি বিদেশের কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার ইচ্ছেও রয়েছে তাঁর। তবে কোনও পরিস্থিতিতেই আর হিজাব ছাড়তে চান না তবাসুম শেখ। আগের মতো এখনও হিজাব পরার পক্ষেই জোর সওয়াল চালিয়ে যাচ্ছেন এই ছাত্রী।