বয়ঃবৃদ্ধ বামনেতাদের ভিড়ে তিনি ছিলেন একমাত্র নবীন সূর্য। জেএনইউ বিতর্কের কারণে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন। পরে বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ভয়ডরহীন আক্রমণে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান। তাঁকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছিল গোটা দেশের বামমনোভাবাপন্ন যুবারা। সেই কানহাইয়া কুমার যোগ দিলেন কংগ্রেসে। আশাহত হয়েছেন তাঁকে ঘিরে স্বপ্ন দেখা যুবক-যুবতীরা। নতুন দলে গিয়েও কানহাইয়া কি তাঁর জনপ্রিয়তার ধার ধরে রাখতে পারবেন?
বাম রাজনীতির মরা গাঙে যেন জোয়ার হয়ে এসেছিলেন তিনি। যাঁকে দেখে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল গোটা দেশ। বিশেষত দেশের বামমনোভাবাপন্ন যুবক-যুবতীরা। অনেকের কাছেই বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে একমাত্র প্রতিবাদী মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তিনি কিন্তু তথাকথিত বড় নেতা নন, সাংসদ বা বিধায়কও নন। তবু, তাঁর কথা শুনতে ভিড় করত মানুষ। অস্ত যাওয়া বাম ঘাঁটি পশ্চিমবঙ্গেও, এই সেদিনও বামেদের সভায় অন্যতম স্টার বক্তা ছিলেন তিনিই। ব্রিগেডে তাঁকে উড়িয়ে আনা হত সুদূর বিহার থেকে। সেই কানহাইয়া কুমার কিনা যোগ দিলেন কংগ্রেসে! সটান বাম থেকে ডানে!
জেএনইউ-র বিতর্কিত ছাত্রনেতা কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন, এই জল্পনা ছিলই। আনুষ্ঠানিক যোগদানের আগে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেন। সেই সময় কেউ কেউ বলেছেন, বাম দলের ‘দমবন্ধ’ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চান কানহাইয়া। এরপর এসএফআইয়ের প্রাক্তন সদস্য ও প্রাক্তন জেএনইউ স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সভাপতি কানহাইয়া কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন তো বটেই, নতুন দলের গুণগানও গেয়েছেন। কংগ্রেসে যোগ দিয়েই কানহাইয়া বলেছেন, “যদি কংগ্রেসকে বাঁচানো যায়, তাহলে বহু মানুষের আকাঙ্ক্ষাও বাঁচবে। সুরক্ষিত থাকবে মহাত্মা গান্ধীর ঐক্যবোধ, ভগৎ সিংহের সাহস এবং অম্বেডকরের সমানতার নীতি। সেই কারণেই আমি কংগ্রেসে যোগ দিলাম।” আরও বলেছেন, “কংগ্রেস স্রেফ একটা দল নয়, কংগ্রেস দেশের সবচেয়ে পুরনো ও সর্বাধিক গণতান্ত্রিক দল। কংগ্রেস ছাড়া এই দেশ বাঁচবে না।”
আরও শুনুন: সোনুর বাড়িতে আয়কর হানা, ‘রাজনৈতিক প্রতিশোধ’ বলছে নেটিজেনরা
কানহাইয়ার শেষ মন্তব্যে সাফাইয়ের গন্ধ ছিল? অনেকেই তেমনটা মনে করছেন। যেহেতু কানহাইয়া নিজেও জানেন, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাই তাঁর জনপ্রিয়তার আদত কারণ। ইদানিংকালে নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপিকে তাঁর মতো করে আর কেউ আক্রমণ করেননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় কানহাইয়ার সেইসব ভয়ডরহীন বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে বারবার। সেই কানহাইয়া কুমার কংগ্রেসে! অনেকেই ভাবতে পারছেন না। আশাহত তরুণ-তরুণীরা। যদিও এই ঘটনা কিন্তু নতুন নয়। জেএনইউ-র বাম ছাত্রনেতা, পরবর্তীকালে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন, এমনটা ঘটেছে বহুবার।
যেমন, শাকিল আহমেদ খানের কথাই ধরুন। ছাত্রাবস্থায় কানহাইয়ার মতোই ছিলেন জেএনইউ-র প্রেসিডেন্ট। বর্তমানে কংগ্রেস সাংসদ। দলের জাতীয় সম্পাদকও বটে। কিংবা বাত্তিলাল বারিওয়া। এসএফআইয়ের হয়ে দুইদফায় জেএনইউ-র প্রসিডেন্ট ছিলেন। বর্তমানে রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক তিনিই। কাছাকাছি সময়ের মোহিত পাণ্ডের কথা বলা যায়। যিনিও কি-না জেনএইউ-র বামপন্থী ছাত্রনেতা থেকে কংগ্রেস নেতা হয়েছেন। মোহিত পাণ্ডে এখন উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া উইংয়ের মাথা।
আরও শুনুন: চেন্নাইয়ে মহিলা কলেজে বসবে রবীন্দ্রনাথের মূর্তি, উদ্বোধনে মমতাকে চায় কর্তৃপক্ষ
অতএব, কানহাইয়া কুমার মোটেই আকাশ থেকে পড়েননি। তথাপি, যিনি কদিন আগেও সিপিআই-এর জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য ছিলেন, সেই তাঁর দলবদল কিন্তু মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। তাঁদের কাছে যেমন রাতারাতি হিরো হয়েছিলেন কানহাইয়া, তেমনই রাতারাতি যেন ভিলেনে পরিণত হয়েছেন। উত্তেজনায় ঘি ঢেলেছে দলবদলের পরপরই সিপিআই দপ্তর থেকে এসি খুলে নিয়ে যাওয়া। যেহেতু সেটি নিজের পয়সায় কিনেছিলেন কানহাইয়া।
অতএব, স্বপ্ন দেখানো কানহাইয়া কুমার এখন স্পপ্নভঙ্গের নাম। অন্তত দেশের বামমনোভাবের তরুণ-তরুণীদের কাছে। সামগ্রিক এই হতাশার ভিতর কী দাঁড়াবে যুবনেতার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ? সময়ই সে উত্তর দেবে।