ধর্মীয় উগ্রতা নিয়ে বরাবরই চাঁচাছোলা কথা বলে থাকেন বর্ষীয়ান শিল্পী জাভেদ আখতার। কিন্তু এবার তাঁর মুখেই শোনা গেল রামনাম। শুধু তাই নয়, হিন্দুদের কার্যত খোলা সার্টিফিকেটও দিয়ে বসলেন শিল্পী। বিতর্ক এড়াতেই কি বাঁকবদল, নাকি তাঁর এই কথার নেপথ্যেও রইল কোনও স্পষ্ট বক্তব্য? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
জাভেদের মুখে এবার রামনাম! শুধু তাই নয়, হিন্দুদের দরাজ সার্টিফিকেট দিতেও পিছপা হলেন না বর্ষীয়ান শিল্পী। রাজ ঠাকরের দীপোৎসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে ‘জয় সিয়ারাম’ বলার পক্ষেই সওয়াল করলেন জাভেদ আখতার। হিন্দি ছবির কিংবদন্তি চিত্রনাট্যকার ও গীতিকার, কবি, এই পরিচয়গুলির পাশাপাশি জাভেদ আখতার বরাবরই স্পষ্টবক্তা বলে পরিচিত। বিশেষ করে রাজনীতির ময়দানে ধর্মকে টেনে আনা নিয়ে তিনি বারবার অপছন্দ প্রকাশ করেছেন। সাধারণত হিন্দুত্ববাদ নিয়ে যিনি কড়া সমালোচনা করে থাকেন, তাঁর এহেন বদল দেখে চমকে গিয়েছেন অনেকেই। পালটা প্রতিক্রিয়ার চাপে পড়েই কি উলটো সুর ধরলেন তিনি? উঠছে এমন প্রশ্নও। কিন্তু ঠিক কী বলেছেন জাভেদ আখতার?
আরও শুনুন: শুধু ধর্ম ধর্ম! তোমার ক্রিকেট নেই, ভারতবর্ষ!
দীপোৎসব অনুষ্ঠান থেকে জাভেদ বলেছেন, ধর্মবিশ্বাসের দিক দিয়ে তিনি নাস্তিক। কিন্তু তা বলে ধর্ম বিষয়টিকেই নাকচ করে দিতে হবে, এমন কথাও তিনি বলেন না। রাম সীতা তো কেবল হিন্দুদের ভগবান নন, রাম সীতা আসলে ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরই এক অংশ। এ প্রসঙ্গে জাভেদ টেনে এনেছেন তাঁর ছোটবেলার এক স্মৃতি। তিনি বলেন, ছোটবেলায় তিনি যখন লখনউয়ে থাকতেন, দেখতেন বিত্তশালীরা সকালবেলা গুড মর্নিং বলতেন। আর সাধারণ মানুষেরা একে অপরকে সম্ভাষণ জানাতেন জয় সিয়া রাম বলে। আসলে এই সম্ভাষণের মধ্যে তো কোথাও ধর্মের উগ্র আস্ফালন নেই, বরং রয়েছে শিকড়ের টান। এই যে সীতা ও রামের নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হওয়া, এর মধ্যে ভালোবাসা ও ঐক্যের ধারণাটিও জুড়ে ছিল বলেই মনে করেন জাভেদ। সেখান থেকে রামকে আলাদা করে ফেলা, রামের নামে হিংস্র স্লোগান তোলা তাঁর কাছে অন্যায়।
আরও শুনুন: দুর্ভাগা সেই দেশ… সম্প্রীতির প্রয়োজনে শিল্পীর বন্ধুতাও যেখানে মাপা হয় ধর্মের পরিচয়ে
জাভেদ আখতার মনে করেন, ধর্মের কড়াকড়ি পেরিয়ে ধর্মীয় অনুষঙ্গকে যে এমন সহজ সম্ভাষণে ধরে ফেলা যায়, এ কথা শিখিয়েছিল ভারতবর্ষ। বুঝতে শিখিয়েছিল, প্রত্যেকটি ভিন্ন মত, ভিন্ন ভাবনা সহজেই একে অপরের পাশে থাকতে পারে। সেই সহিষ্ণুতা না থাকাটাই অন্যায় বলে মনে করেন বর্ষীয়ান শিল্পী। এর আগে ধর্মীয় উগ্রতা প্রসঙ্গে আরএসএস, বিশ্বহিন্দু পরিষদ, বজরং দলের সঙ্গে তালিবানের তুলনা করেছিলেন জাভেদ। কিন্তু সে প্রসঙ্গে তিনি এ কথাও বলেছিলেন, বেশিরভাগ হিন্দু সহিষ্ণুতার আদর্শে বিশ্বাসী। আর তাঁরা সহনশীল বলেই ভারত কখনও আফগানিস্তান হবে না। এবারও, সেই সহিষ্ণুতার কথাটিই আসলে নতুন করে মনে করিয়ে দিলেন জাভেদ আখতার।