যুদ্ধটা যেন ছিল ডেভিড বনাম গোলিয়াথের। কিন্তু না, যত সহজে ডেভিডদের পরাস্ত করা যাবে মনে করা হয়েছিল, তা সম্ভব হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যেমন বিশ্বের রাজনীতি ও কূটনৈতিক সম্পর্ককে বদলে দিয়েছে, তেমনই বদলে দিয়েছে যুদ্ধের ব্যাকরণকে। আর তা থেকেই এবার পাঠ নেবেন ভারতীয় সৈনিকরা। শিখে নেবেন আধুনিক যুদ্ধের কলাকৌশল।
রুশ আগ্রাসন বিদ্ধস্ত করেছে ইউক্রেনকে। সে-দেশের শহরে শহরে এখন ধ্বংসের ছবি। সে সব যত প্রকাশ্যে আসছে ততই শিউরে উঠছে বিশ্ব। বুচা-সহ অন্যান্য শহরে গণহত্যার জেরে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল বরখাস্ত করেছে রাশিয়াকে। এ যেমন যুদ্ধের একটা দিক, তেমনই এই যুদ্ধ আরও অনেক কিছু ইঙ্গিতও দিচ্ছে। প্রবল শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়া ইউক্রেনের রাজধানী কিভের পুরো দখল নিতে পারেনি। প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনীয় সেনা। একটা সময় রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেন-জয় যত সহজ হবে মনে করা হচ্ছিল, তা কিন্তু হয়নি। সমর বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, রাজধানী দখল করতে না পারার আক্রোশ গিয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী শহরগুলির উপর। তাই সেখানে ধ্বংসের ছবি ভয়াবহ। একদিকে রাশিয়ার আক্রমণাত্মক মনোভাব, অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রতিরোধ – দুয়ে মিলে এই যুদ্ধ অনেক নতুন দিক খুলে দিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ভারতের প্রাক্তন সেনা অফিসাররা এই যুদ্ধের কলাকৌশল খুঁটিয়ে দেখছেন। এবং তা থেকে যে ভারতীয় সেনাও আধুনিক যুদ্ধের কলাকৌশল শিখে নিতে পারে, এমনটাই মত তাঁদের।
আরও শুনুন: সম্প্রতি চর্চায় SSKM-এর উডবার্ন ওয়ার্ড, জানেন কে এই উডবার্ন সাহেব?
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণের স্ট্র্যাটেজিই নিয়েছিলেন। তাতে রাশিয়া যে সাফল্য লাভ করেছে, তা মেনে নিচ্ছেন অনেকেই। আন্তর্জাতিক সমীকরণে যে রদবদলই আসুক না কেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে পুতিন যে বার্তা দিতে চাইছিলেন পশ্চিমী দেশগুলিকে তা দিতে পেরেছেন। অর্থাৎ যুদ্ধ কূটনৈতিক স্তরে পুতিনের লক্ষ্যপূরণ করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই স্ট্র্যাটেজি কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কেননা আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দরুণ, রুশ বাহিনীর অনেক উচ্চপদস্থ সেনাধিকারিকেরও প্রাণ গিয়েছে। যেভাবে রণসজ্জা সাজিয়েছিল রাশিয়া তা অবাক করেছে বহু সমর বিশেষজ্ঞকে। যেখানে প্রতিপক্ষের হাতে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল আছে, সেক্ষেত্রে বায়ুসেনার যথেষ্ট ‘কভার’ ছাড়া কেন এগোনোর সিদ্ধান্ত নিল রাশিয়া, তা ভেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে এই ‘ট্যাঙ্ক ফর্মেশন’ কি রাশিয়ার যুদ্ধের কৌশলগত ভুল? এই নিয়েই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
আরও শুনুন: লম্বা লেজ কিশোরের, পরিবারের বিশ্বাস পুনর্জন্ম হয়েছে স্বয়ং বজরংবলীর
সমর বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, বুচা গণহত্যা ‘রেগুলার আর্মি’ বা পেশাদার রুশ সেনাদলের কাজ নয়। কারণ, বিশ্বের যে কোনও সুশিক্ষিত সেনবহিনী একটি নির্দিষ্ট নীতি বা ‘মিলিটারি কোড অফ কন্ডাক্ট’ মেনে চলে। ওই ঘটনা নেপথ্যে রয়েছে পুতিনের পাঠান চেচেন মিলিশিয়া। কারণ নৃশংস চেচেন যোদ্ধাদের সেই অর্থে সেনা নীতি বা মানবাধিকার মেনে চলার কোনও বালাই নেই। যার ফলশ্রুতি হিসাবে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে ইউক্রেনে! এই গণহত্যা আবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে যথেষ্ট চাপে রেখেছে রাশিয়াকে। প্রশ্ন অতএব এইটাই যে, যুদ্ধের কৌশলই কি রাশিয়াকে এহেন দ্বিমুখী পরিস্থিতিতে এনে হাজির করেছে? যুদ্ধের কৌশল রণসজ্জা নিয়ে যাঁরা ভাবনা-চিন্তা করেন, সেনার সেই উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা এই বিষয়গুলির উপরই জোর দিচ্ছেন।
বাকি অংশ শুনে নিন।