প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের সূত্রে তাঁরা আলাদা। কিন্তু দেশরক্ষার ধর্ম তাঁদের এক করেছে। সেই কাজই হয়ে উঠেছে প্রকৃত ধর্ম। ফলে, কোনও ধর্মাচরণেই তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। সম্প্রতি দেশজুড়ে যখন অসহিষ্ণুতার হাওয়া, তখন এক অনন্য নজির গড়লেন ভারতীয় সেনারা। একযোগে নমাজ আদায় করলেন তাঁরা। যে ছবি প্রকাশ্যে আসার পর দেশের সেনার এই ঐক্যকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন দেশবাসী।
বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। ভারতবর্ষের মৌলিকতা যেন বাঁধা আছে এই কথাটিতেই। তবু নানা সময় বিদ্বেষ, হানাহানির ঘটনা যে এই দেশকে রক্তাক্ত করে না, তা নয়। তবে সেই বিভাজন পেরিয়ে, যাঁরা দেশকে ভালোবাসেন, দেশকে রক্ষা করেন, তাঁরা কিন্তু বৈচিত্রকে সম্মান করেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকেন। সম্প্রতি এই কথাটিই যেন আবার মনে করিয়ে দিলেন ভারতীয় সেনারা।
আরও শুনুন: ‘লাউডস্পিকার যখন ছিল না, তখন কি ভগবান প্রার্থনা শুনতেন না?’
চলছে রমজান মাস। এই সময় ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা তাঁদের ধর্ম পালন করেন নানা ভাবে। নমাজ আদায় অর্থাৎ প্রার্থনা তার মধ্যে অন্যতম। সেই কাজে এবার শামিল হলেন অন্য ধর্মাবলম্বীরা। তাঁরা প্রত্যেকেই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত। সম্প্রতি একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়, যেখানে দেখা যাচ্ছে অন্যান্যদের সঙ্গেই নমাজ আদায় করছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি পি পান্ডে। ছবিতে প্রার্থনা করতে দেখা যাচ্ছে এক শিখ ধর্মাবলম্বী অফিসারকেও। শ্রীনগরের এই ছবিতে যেন ফুটে উঠেছে সত্যিকার ভারতবর্ষ। এই কথাই বলছেন দেশবাসী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিটি তুলে ধরে অনেকেই লিখেছেন, এইটাই তো আমাদের দেশ। আমাদের দেশ তো এভাবেই বৈচিত্র্যকে স্বীকার করে সকলে হাতে হতে হাত রেখে বেঁধে বেঁধে থাকে। দেশরক্ষার পবিত্র ধর্ম যাঁরা গ্রহণ করেছেন, তাঁদের কাছে আর অন্য প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়াতে পারে না। তাই এই মিলনমেলার আয়োজন। তাই এভাবে ধর্মাচরণের মাধ্যমে ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারেন ভারতীয় সেনার বীর সৈনিকরা।
আরও শুনুন: ‘বেকারত্বের উপর বুলডোজার চালাবেন কবে?’, তরুণীর ‘সাহসী’ প্রশ্ন বিজেপি মুখপাত্রকে
এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে, ধর্মের নামে দেশে এই মুহূর্তে একাধিক হিংসার ঘটনা ঘটছে। কারাউলি থেকে জাহাঙ্গিরপুরী- ধর্মভিত্তিক বিভাজন গড়িয়েছে হিংসার আগুনে। মহারাষ্ট্র থেকে উত্তরপ্রদেশ- চলছে আজান বনাম হনুমান চালিশা নিয়ে মাতামাতি। কর্ণাটকে এক ধর্মের মানুষের উপর অন্য ধর্মাবলম্বীদের আক্রমণের ঘটনা সামনে এসেছিল কিছুদিন আগেই। একের পর এক ঘটনায় যেন মনে হচ্ছে, এ দেশ হানাহানি আর বিদ্বেষের। কিন্তু সত্যিই কি তাই? এই দেশের মানুষই তো নিজের নিজের ধর্মাচরণ বজায় রেখেই পরস্পর দীর্ঘদিন একসঙ্গে বাস করেছেন। এই দেশের মানুষই তো ধর্মপরিচয় পিছনে ফেলে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন দেশবাসী হিসাবে। আজও তাই করছেন মানুষ। আজও একজন সেনার কাছে ধর্মের আগে সত্যি তাঁর দেশ। সেই কথাটাই যেন এই অসহিষ্ণুতার আবহে আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন ভারতীয় সেনা। জানিয়ে দিলেন, ধর্মাচরণ যেমনই হোক না কেন, তাতে আপত্তি থাকার কথা নয়। কেননা দেশরক্ষাই যে তাঁদের প্রকৃত ধর্ম।