সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট আরও একবার মনে করাল, গণতান্ত্রিক পরিসরে রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করা অন্যায় নয়। আর এর মধ্যেই এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষা জানাল, গণতন্ত্রের সূচকে ভারতের র্যাঙ্কিং ঠিক কতখানি নেমে গিয়েছে। রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করাই যদি সংকটের হয়, তাহলে গণতন্ত্রের কি বিপন্ন হওয়ারই কথা নয়?
সংবিধান বলছে, দেশে গণতন্ত্র চলছে। ভোটের তোড়জোড় চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চাইছে, দেশ চালানোর ব্যাপারে প্রতিটি মানুষের মতামত জরুরি। আর এসবের মধ্যেই সামনে আসছে গণতান্ত্রিক পরিসর বজায় রাখার নিরিখে কোন দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে, সেই তালিকা। সেই V-Dem রিপোর্ট কিংবা Varieties of Democracy রিপোর্ট গোটা বিশ্বের মোট ১৭৯টি দেশকে নিয়ে এই সমীক্ষা করেছে। আর সমীক্ষার ফলাফল জানাচ্ছে, সেখানে ভারতের ঠাঁই হয়েছে বেশ নিচের দিকেই। নাইগার আর আইভরি কোস্টের মতো দুটি আফ্রিকান দেশের মাঝখানে জায়গা হয়েছে ভারতের। র্যাঙ্কিং-এর বিচারে তার নম্বর ১০৪। অর্থাৎ তালিকার প্রথম ৫০ শতাংশ দেশের মধ্যেই জায়গা হয়নি ভারতের।
আরও শুনুন:
জিডিপি বৃদ্ধির হারে আশার আলো, কিন্তু তার নেপথ্যে কি কর্মসংস্থানের উন্নতি দেখা গেল?
গণতন্ত্র আসলে সেই সিস্টেমকে বোঝায়, যেখানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার রয়েছে। আর গণতান্ত্রিক পরিসর বজায় রাখার ভিত্তিতে কোনও দেশের পিছিয়ে যাওয়া বুঝিয়ে দেয়, সেই মতপ্রকাশই কোথাও সংকটের মুখে পড়ছে। সম্প্রতি খোদ শীর্ষ আদালতের এক রায়েই সে কথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সেখানে সুপ্রিম কোর্ট মনে করিয়ে দিয়েছে, সরকারের সমালোচনা মানেই সেটা অপরাধ নয়। প্রত্যেক নাগরিকের নিজের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। জানা গিয়েছে, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করার সিদ্ধান্ত অভিশপ্ত, এ কথা লেখার দরুন মহারাষ্ট্রের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ। সেই সূত্রেই দেশের সংবিধানের প্রসঙ্গ টেনে ফের গণতান্ত্রিক পরিসরের কথাটি মনে করিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই আবহেই গণতন্ত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক রিপোর্টটি সেই গণতান্ত্রিক পরিসরের প্রশ্নটিই উসকে দিল।
আরও শুনুন:
বাবার পদবি ব্যবহার করতে লাগবে স্বামীর অনুমতি! এ দেশের মেয়েদের বড় হতে নেই?
শুধু গণতন্ত্রের সাপেক্ষে তালিকার নিচে নেমে যাওয়াই নয়। এই বিচারের সাপেক্ষেই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, বিশ্বের প্রথম দশটি স্বৈরতন্ত্রের মধ্যেও জায়গা করে নিতে পারে এ দেশ। দাবি করা হয়েছে, ২০১৮ নাগাদই ভারত আসলে ‘ইলেক্টোরাল অটোক্রেসি’-তে পরিণত হচ্ছিল, এই সময়ে এসে সেই তকমাটিই আরও পোক্ত হয়েছে। সত্যি বলতে, গোটা বিশ্বজুড়েই সাম্প্রতিক কালে স্বৈরতন্ত্রের ঢেউ দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকেরা। তাঁদের অনুমান, বিশ্বের অন্তত ৪২টি দেশ বর্তমানে সেদিকে এগোচ্ছে। অর্থাৎ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশই এই পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে। ভারতকেও এবার সেই দলের সামনের সারিতেই জায়গা দিল সাম্প্রতিক সমীক্ষা।