সবসময় ছেলে নয়। ঘর আলো করে আসুক মেয়েরাও। এমনটাই চাইছেন দেশের নিঃসন্তান দম্পতিরা। সরকারি তথ্য জানাচ্ছে বিগত বছরে ছেলেদের তুলয়ায় মেয়ে দত্তক নেওয়ার হার বেড়েছে গোটা দেশ জুড়ে। সবথেকে এগিয়ে রয়েছে কোন রাজ্য? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
‘বেটিয়া’ মানেই ‘পরায়া ধন’! বংশের ধ্বজাধারী তাই কেবল ছেলেরাই। আজও সমাজের শিকড়ে গ্রথিত রয়েছে সেই বদ্ধমূল ধারণা। হাজার রকম প্রকল্প, আইন, প্রচার সত্ত্বেও তাই কন্যাভ্রূণ হত্যার মতো ঘটনায় রাশ টানা যায়নি। তবে সাম্প্রতিক এক সরকারি তথ্য খানিক আশার আলো জোগাচ্ছে। ঘরে আলো করে আসুক মেয়েরাও, এই ধারণা ছড়িয়ে নাকি পড়েছে অনেকের মধ্যেই।
আরও শুনুন: বাবার পদবি ব্যবহার করতে লাগবে স্বামীর অনুমতি! এ দেশের মেয়েদের বড় হতে নেই?
সন্তানের লিঙ্গ কী হবে, তা আগে থেকে ঠিক করা অসম্ভব। তবু ছেলে হওয়ার মানত করে দিনের পর দিন মন্দিরে হত্যে দিয়ে পরে থাকেন অনেকেই। কারণ অবশ্য একটা নয়। বংশরক্ষা থেকে শুরু করে বাবা-মার শেষকৃত্য সব দায়ভার ছেলের কাঁধেই। তাই পরিবারে ছেলে না থাকলে চলবে না। মেয়ে জন্মালে তাকে মরতে হবে ভ্রূণ অবস্থাতেই। অনেকসময় শিক্ষিত পরিবারেও এই ধরনের ঘটনার কথা শোনা যায়। কিন্তু যারা নিঃসন্তান! তাঁরা চাইলেই নিজেদের পছন্দ মতো সন্তান বাড়িতে নিয়ে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে সন্তানের লিঙ্গ নিয়েও সমস্যার কারণ নেই। ছেলে দত্তক নিলেই হল। স্বাভাবিক ভাবেই মনে হবে, মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের দত্তক নেওয়ার হার অনেকটাই বেশি হবে। কিন্তু সরকারি তথ্য বলছে অন্য কথা। অর্থাৎ বাস্তবে হচ্ছে এর উলটোটাই। দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে ছেলেদের মতো মেয়েরাও গুরুত্ব পাচ্ছে নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে। কিছুক্ষেত্রে সেই হার বেশিও হচ্ছে।
আরও শুনুন: হিজাব বিতর্কের ভারতবর্ষে মনে থাকুক ‘অবরোধবাসিনী’দের হয়ে বেগম রোকেয়ার লড়াই
সম্প্রতি এক সরকারি সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে, বিগত দ বছরে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের দত্তক নেওয়ার দিকেই বেশি ঝুঁকেছেন ভারতীয়রা। মোট ১১টি রাজ্যের পাঠানো তথ্য বলছে ২০২১-২৩ সালে ১৫৪৮৬ জন শিশুকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯৪৭৪জন মেয়ে এবং ৬০১২ জন ছেলে। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। কয়েক মাস থেকে ৬ বছর বয়স এমন শিশুদেরই দত্তক নেওয়া হয়েছে। আর এক্ষেত্রে সবথেকে এগিয়ে পাঞ্জাব। এই রাজ্যে দত্তক নেওয়ায় মেয়েদের হার ছেলেদের প্রায় দ্বিগুণ। যেহেতু সবটাই আইনত নিয়ম মেনে হয়, তাই অন্য ধরনের বিপদের সম্ভাবনা কম। অর্থাৎ সন্তান হিসেবেই যে এই মেয়েদের দত্তক নেওয়া হচ্ছে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। আর সেখানেই অবাক হয়েছেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা। বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যান আমূল বদলেছে শেষ দু-বছরে। সমাজে এবং পরিবারে মেয়েদের গুরুত্বও যে কতটা তা দেরিতে হলেও বুঝতে পারছেন কেউ কেউ। আর সেই কারণেই বাড়ছে মেয়েদের দত্তক নেওয়ার হার। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনিতে মেয়েদের জন্য হাজার সুবিধা বা প্রকল্প এনেও কন্যাভ্রূণ হত্যা চিরতরে বন্ধ করতে পারেনি সরকার। সেই দেশে দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েদের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় আশার আলো দেখছেন অনেকেই।