হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় মুসলিম প্রার্থীর। তাও আবার অযোধ্যার মতো ‘হিন্দু গড়ে’। তাঁর এই সাফল্যে রীতিমতো অবাক বিরোধী শিবিরের সদস্যরা। যদিও এই ফলাফলকে, এলাকায় হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবেই দেখছেন ওই বিজয়ী প্রার্থী। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
রাজনীতি হোক বা ধর্ম, বিভিন্ন প্রসঙ্গে বরাবরই চর্চায় থাকে অযোধ্যা। এবার সেখানেই ধরা পড়ল বিরল নজির। পুর-নির্বাচনে অযোধ্যার এক হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন মুসলিম প্রার্থী সুলতান আনসারি। নির্দল হিসেবে প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই তাক লাগানো ফল করেছেন তিনি।
আরও শুনুন: বিজেপির সহায় হল না বজরংবলী, কর্ণাটকের ফল বেরোতেই মোক্ষম খোঁচা বিরোধীদের
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে অযোধ্যার পুরনির্বাচনের ফলাফল। ৬০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৭টিতে জয়লাভ করেছে বিজেপি। বাকি ১৭টি ওয়ার্ডে এসপি এবং নির্দল প্রার্থীরা জিতেছেন ১০টি ওয়ার্ডে। সেই ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যেই রয়েছে জনপ্রিয় হিন্দু অধ্যুষিত ‘রাম অভিরাম দাস’ নামে একটি ওয়ার্ড। অযোধ্যার রাম মন্দিরের ঠিক পিছনে অবস্থিত এই ওয়ার্ডের নাম রাখা হয়েছে একজন হিন্দু নেতার নামেই। রাম মন্দির তৈরি নিয়ে দেশজুড়ে যে আন্দোলন জন্ম নিয়েছিল, তার অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন এই রাম অভিরাম দাস। এই ওয়ার্ডে মূলত হিন্দুদেরই প্রাধান্য বেশি। জানা গিয়েছে, সেখানে মুসলিম ভোটারের সংখ্যা মাত্র ৪৪২ জন। উল্টোদিকে হিন্দু ভোটার রয়েছেন প্রায় ৩৮৪৪ জন। কিন্তু ফলাফলের সময় এই বিভেদের ছবি একেবারেই ধরা পড়েনি। বরং বড় ব্যবধানে এই এলাকা থেকেই জয়লাভ করেছেন সুলতান। প্রদত্ত ভোটের ৪২ শতাংশ তিনি একাই পেয়েছেন। যদিও এই জয় দেখে একেবারেই আশ্চর্য হননি সুলতান। তাঁর দাবি, প্রায় ২০০ বছর ধরে তাঁর পরিবার এই এলাকার বাসিন্দা। তাই এলাকার উন্নতির স্বার্থে পুরভোটের লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। নিজের ইচ্ছার কথা বন্ধুদের জানাতেই এক বাক্যে রাজি হয় তাঁরাও। অবশ্য সেই বন্ধুদের অধিকাংশই হিন্দু। কিন্তু তাতে কী! সুলতানের জন্যই নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে প্রচার করেন তাঁরাই। নির্বাচনে জয়লাভের পর সেই হিন্দু বন্ধুদের অশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন সুলতান। আর তাঁর জয়ের জন্য এলাকার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতিকেই দায়ী করেছেন তিনি।
আরও শুনুন: জোর করে মহিলার ধর্ম পরিবর্তন মুসলিম ব্যক্তির! অভিযোগ পেয়ে বিশেষ পদক্ষেপ আদালতের
একই ভাবনা ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশেরও। তাঁরা মনে করেন, অযোধ্যায় শুধু হিন্দুরা নন, মুসলিমরাও যথেষ্ট শান্তিতে বাস করেন। গোটা দুনিয়ার কাছে হয়তো এই স্থান রামচন্দ্রের জন্মভূমি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, কিন্তু তাই বলে এখানে মুসলিমদের থাকতে কোনও অসুবিধা হয় না। এই দাবি ওই এলাকার হিন্দু-মুসলিম সকলেরই। আগামী দিনেও এই সম্প্রতির ছবি ছড়িয়ে পড়ুক দেশের প্রতিটি এলাকায়, এই আশাই করছে ওয়াকিবহাল মহল।