স্বাধীনতার পর কেটে গিয়ে ৭৫ বছর। এতদিনে এই প্রথমবার পায়ে জুতো পরলেন তাঁরা। শুনতে অবাক লাগছে তো! তামিলনাড়ুর এক গ্রামে কিন্তু এটাই সত্যি। এতদিনে জুতো পরে রাস্তায় হেঁটে প্রায় বিপ্লবই ঘটিয়ে ফেলেছেন দলিত বাসিন্দারা। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
২০২৩ সাল প্রায় যাই যাই করছে। এতদিনে চাঁদের উলটো পিঠে পৌঁছে গিয়েছে ভারতের চন্দ্রযান। এআই এসে নাকি বদলে দিচ্ছে গোটা বিশ্বকে। একদিকে প্রগতির আলো। আর তার নিচেই জমে অন্ধকার। এতদিনে এই প্রথম জুতো পরে হাঁটলেন তামিলনাড়ুর এক গ্রামের দলিত বাসিন্দারা। উঁচু জাতের মানুষদের ফতোয়া উড়িয়ে যেন বিপ্লবই ঘটালেন তাঁরা।
আরও শুনুন: Bharat Nyay Yatra: ন্যায়ের জন্য হাঁটা আসলে ‘ধর্মযাত্রা’! আদৌ কি বোঝাতে পারবেন রাহুল?
স্মরণকালে তাঁরা জুতো পরে বিশেষ একটি রাস্তায় হাঁটেননি। তার একমাত্র কারণ ছিল, উঁচু জাতের আপত্তি। দেশে অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে তা মুছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু মন থেকে কি আদৌ তা মুছেছে! দলিতদের প্রতি কি এখনও তেমন সম্মান দিতে পারে উচ্চবর্ণের মানুষ? উত্তর যেন লুকিয়ে আছে এই ঘটনাতেই। ‘রাজভুর’ নামে ওই গ্রামে দলিতরা এতকাল জুতো পরতেন না। তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত এই মানুষদের জুতো পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন উচ্চবর্ণের বাসিন্দারাই। গ্রামের ৯০০ জনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠরাই উচ্চবর্ণের। তাঁরাই কার্যত এই ফতোয়া জারি করেছিলেন। কৌশলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ভয়। এক কালে জোর জুলুমই চলত। পরে বলা হতে থাকে যে, নিম্নবর্ণের মানুষ যদি জুতো পরেন তাহলে স্থানীয় দেবতা অসন্তুষ্ট হবেন। আর তাতে সেই মানুষদের মৃত্যুও হতে পারে। একটি কুসংস্কারকে ভর করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল অযৌক্তিক গল্প। বলা হয়েছিল, মন্ত্র পড়ে একটি পুতুলকে ওই রাস্তায় পোড়ানো হয়েছে। যার দরুন নিম্নবর্ণের কেউ জুতো পরলেই তাঁর মৃত্যু অবধারিত। বলা বাহুল্য, এই সব নিয়ম শুধু নিম্নবর্ণের জন্যই ছিল বরাদ্দ। উচ্চবর্ণের মানুষদের উপর দেবতার কোপ পড়ার কোনও ব্যাপার ছিল না। এই ভয়েই এতদিন জুতো পরতেন না কেউ।
দীর্ঘদিনের সেই বঞ্চনার অবশেষে অবসান হল। গ্রামের ৬০ জন দলিত বাসিন্দা জুতো পরেই হাঁটলেন রাস্তার উপরে। তবে লড়াইটা সহজ ছিল না। দলিতদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে এমন একটি সংস্থার পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। যদিও তাতে অনুমতি দেওয়ায় প্রথমে গররাজি ছিল স্থানীয় প্রশাসন। পরে, স্থানীয় অন্যান্য সংস্থা এবং বাম দলের সহযোগিতায় অবস্থা বদলায়। অনিয়মের রাজত্বে ইতি পড়ে। দলিতরা রাস্তায় হাঁটেন জুতো পরে। শুধু জুতো পরে হাঁটাই নয়, তাঁরা একটি মন্দিরেও ওঠেন। সেখানেও এতদিন পা রাখার অনুমতি ছিল না। স্বাধীনতার এতদিন পরে ওই গ্রামের দলিত বাসিন্দারা যেন সত্যিকার স্বাধীনতার স্বাদ পেলেন।