ধর্ম নিয়ে ইদানীং বিস্তর ভেদাভেদ। তার অনেকখানিই হয়তো রাজনৈতিক কারণে। তবে ধর্মগ্রন্থগুলি কিন্তু বৃহত্তর মানবতার কথাই বলে। বলে, জীবনকে আরও উৎকর্ষ করে তোলার কথা। আর তাই পুরাণ-শাস্ত্র পড়ায় কোনও বাধা নেই কেরলের এক ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কী বলছেন সেখানকার শিক্ষক-ছাত্ররা? আসুন শুনে নিই।
গীতা-উপনিষদকে যদি শুধু হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থ হিসাবে সরিয়ে রাখা হয় তাহলে ভুল হবে। তা যেমন হিন্দু ধর্মকে জানতে সাহায্য করে, তেমনই একজন মানুষকে জীবনের আলোকময় পথে এগিয়ে যাওয়ার দিশাও দেখায়। নিজের অভিজ্ঞতাতেই এ কথা জানতেন মহম্মদ ফৈজি। আর তাই ছাত্রদের জন্যও সে ব্যবস্থাই করেছেন। তিনি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, সেই ‘অ্যাকাডেমি অফ শরিয়া অ্যান্ড অ্যাদভান্সড স্টাডিজ’-এ (Academy of Sharia and Advanced Studies) যত্ন করেই পড়ানো হয় সংস্কৃত। শুধু তাই নয়, ক্লাসে সংস্কৃতেই কথা বলেন পড়ুয়া এবং শিক্ষকরা।
আরও শুনুন: বলিহারি! আছে দুই সঙ্গিনী ও আট সন্তান, ফের বান্ধবীর খোঁজে ব্যক্তি
স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তাঁরাও গীতা ও উপনিষদের নির্বাচিত অংশ পড়ছেন। উচ্চারণ করছেন গুরুপ্রণাম মন্ত্র। এর আগে তাঁদের অবশ্য সংস্কৃত সম্বন্ধে ধারণা ছিল না। সব কৃতিত্ব দিতে হয় অধ্যক্ষ ফৈজিকেই। তিনি নিজে আচার্য শংকরের দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। আর তাই জানেন, সংস্কৃত জেনে শাস্ত্রের মূল কথাগুলো জানা কতটা জরুরি। তবে পড়ুয়াদের প্রত্যেকে এতটা পড়াশোনার চাপ নিতে পারে না। তাই এই ক্লাসের জন্য দিতে হয়েছে পরীক্ষাও। বেছে বেছে এখন নির্দিষ্ট কয়েকজন পড়ুয়াকে নিয়েই চলে সংস্কৃতের ক্লাস।
আরও শুনুন: নগ্ন হয়ে ঘোরাই শখ, নির্জন বাগানের খোঁজ করছেন ৮৬ বছরের বৃদ্ধ
তব এরকম ক্লাস শুরু আগে কি প্রতিবন্ধকতা ছিল? আপত্তি জানিয়েছিলেন অভিভাবকরা? আশ্চর্য হলেও উত্তরটা হল, না। অর্থাৎ ছেলেরা সংস্কৃত পড়বে এতে কেউই আপত্তি জানাননি। বরং সকলেই অধ্যক্ষের কথার সঙ্গে একমত হয়েছেন যে, অন্য ধর্মকে জানা জরুরি এবং জানতে গেলে শাস্ত্র পড়াও জরুরি। অতএব পড়ুয়ারা তা নিয়ে পড়াশোনা করবে, এতে আপত্তির কী থাকতে পারে! তবে গোড়ায় এই বিষয় পড়ানোর শিক্ষক পাওয়া একটু চিন্তার বিষয়ই ছিল। ক্রমে অধ্যক্ষের চেষ্টায় বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকরা এখন সেখানে সংস্কৃতের ক্লাস নিচ্ছেন।
সবথেকে বড় কথা যেটা, সেটা হল, পড়ুয়াদের কেমন লাগছে? হ্যাঁ সংস্কৃত আয়ত্ত করা যে কষ্টকর, তা সকলেই স্বীকার করেছেন। তবে নিয়মিত অভ্যাসের ফলে তা এখন আর ততটা কঠিন লাগছে না। বরং যত শ্লোকের অর্থ বুঝতে পারছেন, তত আনন্দই পাচ্ছেন তাঁরা। আর ধর্ম? না পড়াশোনার পথে ধর্ম কখনই বাধা হয়ে আসেনি। শিক্ষক, ছাত্র, পড়ুয়ারা এ বিষয়ে সকলেই একমত। রাজনীতি যে বিভাজনের কথাই বলুক না কেন, এঁরা যেন নিজেদের কাজেই সেই বিভাজনকে হারিয়ে দিচ্ছেন।