রাতের ডিউটি নিরাপদ নয়। এমনটাই মনে করেন দেশের আধকাংশ চিকিৎসক। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় সেই তথ্য ধরা পড়েছে। এক নয়, রাতের ডিউটিতে একাধিক সমস্যা নিয়ে সরব হয়েছেন তাঁরা। তালিকায় মূলত মহিলা চিকিৎসকরাই রয়েছেন। রাতের ডিউটি কেন অসুরক্ষিত মনে করছেন তাঁরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আর জি কর কাণ্ডের জেরে প্রশ্ন উঠছে মহিলাদের কর্মক্ষেত্রের সুরক্ষা নিয়ে। বিশেষ করে রাতের ডিউটিতে মহিলারা কতটা নিরাপদ, তা নিয়েই চলছে আলোচনা। এই আবহে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের এক সমীক্ষায় ৩৫ শতাংশ চিকিৎসক জানিয়ে দিলেন রাতের ডিউটি তাঁরা নিরাপদ মনে করেন না।
:আরও শুনুন:
কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্তার মুখোমুখি, ভারতীয় আইনে কীভাবে সুরক্ষা পেতে পারেন নারীরা?
৯ আগস্ট রাতের ডিউটিতে বহাল ছিলেন আর জি করের তরুণী চিকিৎসক। কিন্তু ডিউটি শেষে ভোরের আলো দেখার সুযোগ পাননি। হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় তাঁর অর্ধনগ্ন দেহ। ঘটনার ২১ দিন পেরিয়েছে। তবে তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। দোষীদের শাস্তির দাবিতে পথে নামছেন অনেকেই। কর্মবিরতি বহাল রেখেছেন বহু চিকিৎসক। নেটদুনিয়াও এই ইস্যুতে রীতিমতো উত্তাল। এই আগুনে IMA-র সমীক্ষা যেন ঘি ঢালল। রাতের ডিউটিতে বহু আগে থেকেই নিজেদের নিরাপদ মনে করেন না চিকিৎসকরা, তারই প্রমান মিলল এই সমীক্ষায়। মোট ৩৮৮৫ জন চিকিৎসক অংশ নেন সমীক্ষায়। তার মধ্যে ৩৫ শতাংশ দাবি করেছেন রাতের ডিউটি তাঁদের কাছে অসুরক্ষিত। এঁদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা চিকিৎসক। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন বয়সের চিকিৎসকদের মধ্যে আয়োজন করা এই অনলাইন সমীক্ষা, হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।
:আরও শুনুন:
ধর্ষণ-প্রতিরোধী আইনে জোর! নির্ভয়া কাণ্ডেও বদলায় আইন, সমাজের মন বদলেছে কি?
কিন্তু ঠিক কী কারণে রাতের ডিউটি নিরাপদ মনে করছেন না চিকিৎসকরা?
মূলত বিশ্রাম কক্ষের অভাব। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৪৫ শতাংশের দাবি রাতের ডিউটিতে থাকাকালীন হাসপাতালে কোনও বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা পান না। ৫৩ শতাংশের দাবি বিশ্রামকক্ষ থাকলেও তা চিকিৎসকের বিশ্রাম নেওয়ার যোগ্য নয়। অর্থাৎ এতটাই অব্যবস্থা এবং পরিচ্ছন্নতার অভাব, যে একজন চিকিৎসকের পক্ষে সেই জায়গায় বিশ্রাম নিতে যাওয়া সম্ভব নয়। এছাড়া বিশ্রাম কক্ষ রাতের বেলা খালি থাকে না বলেও অনেকেই দাবি করেছেন। কখনও রোগির পরিবার কখনও অন্য কেউ, সেই জায়গা দখল করে রাখেন। কোথাও আবার বিশ্রামকক্ষ এতটাই দূরে যে, অল্প সময়ের জন্য সেখানে যাওয়া বেশ কঠিন। তবে সবথেকে বড় সমস্যা হল বাথরুমের। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রায় এক তৃতীয়াংশের দাবি, তাঁদের হাসপাতালে বিশ্রাম কক্ষের সঙ্গে লাগোয়া বাথরুম নেই। ফলত মহিলা চিকিৎসকদের এই ধরনের কোনও জায়গায় বিশ্রাম নিতে যাওয়া দুঃস্বপ্নের মতো বলেই মনে করছেন অনেকে। পাশাপাশি সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে কমবেশি সকলেই সরব হয়েছেন। অধিকাংশ হাসপাতালের বিশ্রামকক্ষেই সিসিটিভি বা নিরাপত্তা রক্ষী নেই বলে দাবি চিকিৎসকদের। সব মিলিয়ে রাতের ডিউটি বিভীষিকা হয়ে উঠেছে চিকিৎসকদের কাছে। আর জি করের ঘটনার জেরে চিকিৎসকদের সুরক্ষার বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে ঠিকই, কিন্তু এর বহু আগে থেকেই রাতের ডিউটিতে নিজেদের অসুরক্ষিত বলে মনে করা আসছেন দেশের অধিকাংশ মহিলা চিকিৎসক। তাই অবিলম্বে এই সমস্যা মেটানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। ন্যূনতম নিরাপত্তা বাড়ালেই তা সম্ভব, এমনটাই দাবি চিকিৎসকদের।