হিন্দু মন্দিরের সদস্যরাই করেন ইফতারের আয়োজন। প্রতিদিন হাজার হাজার মুসলিম তাতে অংশও নেন। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এমনটাই চলে আসছে। কোথায় রয়েছে এই মন্দির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সারাদিন উপবাস। বিকেলের পর নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পাঠ। তারপর খাওয়া-দাওয়া। এই নিয়মের টানা একমাস রোজা পালন করেন মুসলিমরা। স্বাভাবিকভাবেই দেশের প্রায় সব মসজিদেই এই সময়টা ভিড় লেগেই থাকে। ইফতারের আয়োজনে ব্যস্ত থাকেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ। তবে এর ঠিক উলটো ছবি ধরা পড়ে চেন্নাইয়ে। সেখানে মসজিদ কর্তৃপক্ষ নয়, ইফতারের আয়োজন সারেন জনপ্রিয় এক হিন্দু মন্দিরের সদস্যরা।
আরও শুনুন: মেয়েদের দাম কত! শাসক থেকে বিরোধী, সব পথ শেষে মিলে যায় একই প্রশ্নে?
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এই মন্দির কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ইফতারের আয়োজন করে আসছে। এমনিতে মুসলিম পরব হলেও ইফতারে অংশ নেন হিন্দুদের অনেকেই। খাওয়া-দাওয়া সারেন একইসঙ্গে। তবে আয়োজন বসে কোনও মসজিদ চত্বরে বা মুসলিম বাড়িতে। স্বাভাবিকভাবেই সেই আয়জনে হিন্দুদের তেমন অবদান থাকে না। ব্যতিক্রম চেন্নাইয়ের এই মন্দির। হিন্দুধর্মের পীঠস্থান হলেও রমজান মাসে এখানকার সদস্যরাই ইফতারের ব্যবস্থা করেন। প্রতিদিন প্রায় ১২০০ লোকের রান্না হয়। তারপর নির্দিষ্ট সময়ে তা গাড়ি করে পৌঁছে দেওয়া হয় স্থানীয় মসজিদ চত্বরে। খাবার পরিবেশনের দায়িত্বেও থাকেন মন্দির কমিটির সদস্যরাই। বর্তমানে প্রায় ২৬ জন সদস্য প্রতিদিন ইফতারের আয়োজনের ব্যস্ত থাকেন। সেই দলে খুদেরাও রয়েছে। কারও মধ্যেই ধর্মের ভেদাভেদ নেই। মুসলিম পরবেও সকলে উৎসবের আনন্দেই মেতে ওঠেন। আর যত্ন নিয়ে রোজা পালনকারী মুসলিমদের উপোস ভঙ্গ করান। শোনা যায়, প্রায় ৪০ বছর আগে এই নিয়ম চালু করেছিলেন দাদা রতনচাঁদ নামে এক হিন্দু সন্ত। চেন্নাইয়ের মায়লাপোর অঞ্চলের এক মন্দিরেই প্রথমবার ইফতারের যাবতীয় আয়োজন সারেন তিনি। তারপর সেই খাবার মসজিদের বাইরে বিলি করে আসেন।
আরও শুনুন: বিয়ের পর ধর্মবদল, স্বামী মারা যেতে ফের হিন্দু হন ‘মুঘল’ রানি
এখনও সেই প্রথা মেনে চলেছেন মন্দিরের বর্তমান সদস্যরা। তাঁদের কাছে, বছরের এই সময়টা বিশেষ গুরত্বপূর্ণ। মুসলিমদের মতো তাঁরাও এই অনুষ্ঠানকে পবিত্র বলেই মনে করেন। আর ইফতারের আয়োজন একভাবে সেবা করা। এমনটাই মনে করেন কমিটির সদস্যরা। কেউ কেউ নিজেদের ব্যক্তিগত সমস্ত কাজ বন্ধ রাখেন বছরের এই সময়টায়। পুরো সময়টাই ইফতারের আয়োজন সারেন। মুসলিমরাও এর মধ্যে কোনও ভেদাভেদ খুঁজে পান না। সকলেই স্বচ্ছন্দ্যে অংশ নেন হিন্দুদের আয়োজন করা ইফতারে।