মন্দিরের বাইরে ব্যবসা করতে পারবে না কোনও অহিন্দু। এই দাবিতে হামেশাই সরব হন হিন্দুত্ববাদীরা। সম্প্রতি মন্দিরের বাইরে প্রসাদ বিক্রি অপরাধে মুসলিম দোকানিকে হেনস্থা করল বজরং দল। ঠিক কী ঘটেছে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মন্দিরের বাইরে প্রসাদ আর ফুল বিক্রি করছিলেন। এমনটাই অপরাধ। জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হল দোকান। উপরি পাওনা হুমকি, শাসানি। আর এই সবকিছু স্রেফ একটা কারণে, ধর্ম। দোকানি একজন মুসলমান, তাই মন্দিরের বাইরে প্রসাদ বিক্রি করতে পারবেন না, এমনটাই দাবি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের।
ঘটনা সেই যোগীরাজ্যের। গাজিয়াবাদের সিকরি মহামায়া মন্দিরের কাছেই এমন কাণ্ড ঘটেছে। এমনিতে এই মন্দির বেশ প্রসিদ্ধ। প্রতিদিন ভক্তরা ভিড় জমান। তাই মন্দির লাগোয়া অংশে রয়েছে একাধিক দোকান। কোথাও ফুলমালা, কোথাও প্রসাদ, কোথাও আবার একইসঙ্গে সবরকমের পূজা সামগ্রী পাওয়া যায়। এমনই এক দোকানে সম্প্রতি হাজির হয়েছিলেন বজরং দলের কয়েকজন সদস্য। ফুল-মালা-ফল সহ বিভিন্ন পূজা সামগ্রী ঐ দোকানে পাওয়া যায়। পুজো দেওয়ার জন্য মালা এবং প্রসাদ কিনে অনলাইনে টাকা দিতে চান তাঁরা। কিন্তু কিউআর স্ক্যান করতেই সবাই থমকে যান! প্রাপকের নাম দেখাচ্ছে, শাহরুখ। এই নাম সাধারণত কোনও হিন্দুর হতে পারে না। সঙ্গে সঙ্গে দোকানির ধর্ম জানতে চান ওই হিন্দুত্ববাদীরা। জানতে পারেন, দোকানি আসলে মুসলিম। কিছুক্ষণের মধ্যেই এই খবর বাইরে রটে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন আরও অনেক হিন্দুত্ববাদী। স্থানীয়রা ভিড় জমাতে শুরু করেন। সবার সামনেই শাহরুখের দোকান বন্ধ করেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, সংগঠনের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া, ওই স্থানে আর দোকান দিতে পারবেন না মুসলিম যুবক। একপ্রকার হুমকির সুরেই নিজেদের দাবি জানিয়ে দেন বজরং দলের সদস্যরা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল উপস্থিত হয় পুলিশ। একইসঙ্গে মুসলিম যুবকের পরিবারের সদস্যরাও সেখানে হাজির হন। ঘটনা বিস্তারে শুনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন পুলিশ কর্তারা। তবে দোকান আদৌ থাকবে না বন্ধ করে দেওয়া হবে সেই নিয়ে কিছুই বলা হয়নি। সেক্ষেত্রে মন্দির কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে মনে করছেন পুলিশ আধিকারিকরা। বাকিরাও তাতে সমর্থন করবেন বলেই অনুমান। তবে এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। কুম্ভ মেলা হোক বা বিখ্যাত কোনও মন্দির, সব জায়গাতেই স্রেফ হিন্দুদের ব্যবসার দাবি তোলে হিন্দুত্ববাদীরা। তাঁদের যুক্তি, যারা মূর্তি পূজায় বিশ্বাসী নন, তাঁদের মন্দিরের বাইরে ব্যবসা করার অধিকার নেই। এক্ষেত্রে মূলত মুসলিমদেরই নিশানা করেন হিন্দত্ববাদীরা। তবে এতদিন স্রেফ মুখের কথায় নিজেদের দাবি জানাতেন তাঁরা, এবার সত্যি সত্যিই মন্দিরের বাইরে মুসলিম দোকান বন্ধ করে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করলেন হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা।