দেশের শীর্ষ প্রশাসনিক পরীক্ষা UPSC। আর সেই পরীক্ষাই কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেছে ২৮ বছরের ছেলে উমেশ লাবানা। ভাবছেন, তাতে কী? একটা পরীক্ষায় কয়েকজন পাশ করবে, এ তো জানা কথাই। কিন্তু আর পাঁচজনের মতো ছিল না এই ছেলেটির যাত্রাপথ ।
ঠিক যেন এক রূপকথার গল্প। যে ছেলেটির পড়াশোনাই বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল একসময়, সে-ই নাকি আজ দেশের এক শীর্ষ পরীক্ষায় প্রমাণ করে দিল নিজের যোগ্যতা। সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও এমন একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা সহজ ছিল না মোটেও। কিন্তু কঠিন পথ বেছে নিতে পারলে তবেই না একদিন সাফল্য ধরা দেয় হাতের মুঠোয়! উমেশ লাবানা-র গল্পটা আসলে তেমনই। রূপকথা? উঁহু, জীবন।
আরও শুনুন: এটাই আসল ভারতবর্ষ… এলাকার হিন্দু মন্দির বাঁচাতে আদালতের দ্বারস্থ মুসলিম বাসিন্দারা
উমেশ কিন্তু জন্মান্ধ ছিল না। ছোটবেলায় বন্ধুদের কাছে বাহবা নিতে মোটরবাইকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাইসাইকেল ছোটাত সে। কিন্তু যত বড় হচ্ছিল, তত সে বুঝতে পারছিল যে তার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসছে। গ্রামের স্কুলে যখন তার ক্লাস নাইন, সেই সময় দেখা গেল সে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে গিয়েছে।
ওই বয়সের একটি ছেলের কাছে এই নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই রীতিমতো কঠিন। হিমাচলপ্রদেশের কোলার গ্রামের ছেলে উমেশের মনে হয়েছিল পড়াশোনাটাই বন্ধ করে দিতে হবে এবার। মা বাবা অবশ্য হাল ছাড়েননি। তাঁরা ছেলেকে বই পড়ে শোনাতেন, পড়াতেন, পাশাপাশি ছেলের জন্য উপযুক্ত স্কুলের খোঁজও চালাচ্ছিলেন তাঁরা। দেরাদুনে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ভিজুয়ালি হ্যান্ডিক্যাপড-এর দিকেও তাঁদের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু কোনও উপায় হচ্ছিল না। হতাশ হয়ে পড়তে পড়তে একসময় উমেশ জানতে পারে ব্রেইল পদ্ধতির কথা। অন্ধ মানুষদের পড়ার জন্য এক বিশেষ পদ্ধতি এটি। কাছাকাছি অঞ্চলে এক দৃষ্টিহীন শিক্ষক ছিলেন, দীনেশ সুদ। তিনিই উমেশকে মাত্র তিন দিনে ব্রেইল পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। তারপর উমেশ আর পিছনে ফিরে তাকায়নি।
আরও শুনুন: স্বেচ্ছায় খবরের কাগজ ফিরি করছে স্কুলপড়ুয়া, দেখে আপ্লুত নেটদুনিয়া
স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনার জন্য সিমলা চলে আসে উমেশ। এখানে তার সহপাঠী কিংবা শিক্ষক কেউই তাকে তার অসুবিধা বুঝতেই দেননি বলে জানিয়েছে সে। সেখান থেকে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে গবেষণা করছে উমেশ। আর এর সঙ্গে সঙ্গেই এবার সর্বভারতীয় প্রশাসনিক পরীক্ষাতে ৩৯৭ র্যাঙ্ক করল সে। আইএএস-এ যোগ দেওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে উমেশ। পদে যোগ দেওয়ার পর প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি আমজনতার মনোভাব বদলাতে উদ্যোগ নেবে সে, এমনটাই জানিয়েছে উমেশ লাবানা।
রবার্ট ফ্রস্টের এক বিখ্যাত কবিতা ‘দ্য রোড নট টেকেন’-এ বলা হয়েছিল জীবনের পথ বেছে নেওয়ার কথা। আসলে জীবন আমাদের সামনে দুটো পথ রাখে সবসময়। একটা সহজ, আর একটা কঠিন। জীবন যে ঠিক কেমন হবে, তা নির্ভর করে ওই পথ বেছে নেওয়ার উপরে, অর্থাৎ আমাদের নির্বাচনের উপরেই। প্রতিবন্ধকতা এবং সেই সূত্রে আসা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও হাল ছেড়ে দেওয়ার সহজ পথ বেছে নেয়নি উমেশ। এমনকি এর আগে পরপর দুবছর এই পরীক্ষায় সে অকৃতকার্য হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অধ্যবসায় আর পরিশ্রমই সাফল্য এনে দিল তাকে।