বজরংবলী থেকে শিবের গলায় জড়ানো সাপ, যাবতীয় কিছুর প্রসঙ্গ উঠে এল কর্ণাটকের ভোটের মরশুমে। এমনকি বাদ গেল না দুধ বা হলুদকে ইস্যু বানানোও। কিন্তু গোটা নির্বাচনী প্রচার জুড়ে দেখা মিলল না একটি জ্বলন্ত রাজনৈতিক সমস্যার। হিজাব বিতর্ক নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটল কর্ণাটকের প্রতিটি রাজনৈতিক দলই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ভোটের মরশুমে বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে শুরু হয় তরজা। এ ওকে তোপ দাগেন নেতানেত্রীরা। পাশাপাশি থাকে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও। কর্ণাটকের হেভিওয়েট নির্বাচনের আগেও সেসব দেখা গিয়েছে পুরো মাত্রায়। সেখানে দুধ থেকে হলুদ, কোন বিষয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলেনি। কিন্তু ব্যতিক্রম এক জায়গায়। যেখানে হাজারও অপ্রাসঙ্গিক কথা টেনে এনেও কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন নেতারা, সেখানে হিজাব বিতর্কের মতো একটি রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে মুখ খোলেননি কেউই।
আরও শুনুন: জোর নেই ধর্ম পরিবর্তনে, তিন হিন্দু সন্তানের মা হয়ে উঠেছিলেন কেরলের সুবাইদা
এমনিতে কর্ণাটকের ভোট শুরুর আগে নির্বাচনী প্রচার করতে সে রাজ্যে উড়ে গিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একাধিক ইস্যুতে কর্ণাটক থেকে বিরোধী দল কংগ্রেসকে তোপ দেগেছেন মোদি। এমনকি হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে বলে দাবি তোলা হয়েছে যে ‘কেরালা স্টোরি’-তে, সেই বিতর্কিত সিনেমাটিরও প্রচার করেছেন তিনি। এদিকে মোদি-সহ বিজেপিকে পালটা বিঁধতে ছাড়েনি কংগ্রেস শিবিরও। কন্নড় ও ইংরেজি দৈনিকে রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে বিজেপির দুর্নীতির অভিযোগে সুর চড়ান রাহুল গান্ধীরা। মোদিকে সাপের সঙ্গে তুলনা করেন কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। সেই কটাক্ষের প্রেক্ষিতে আবার মোদির জবাব, শিবের গলায় সাপ জড়ানো থাকে। সুতরাং কর্ণাটক ও বাসিন্দাদের শিব বলেই মনে করছেন তিনি। শুধু সাপ ইস্যুতেই নয়, বজরংবলী ও বজরং দল নিয়েও বিতর্কে জড়িয়েছে দুই পক্ষ। করোনার সময় মোদির রোগ প্রতিষেধক হিসেবে হলুদের উল্লেখ ও তা নিয়ে কংগ্রেসের কটাক্ষ, আমুল ও নন্দিনী দুই ব্র্যান্ডের দুধের লড়াই, এই সবকিছুই উঠে এসেছে রাজনৈতিক প্রচারে। কিন্তু এসবের মধ্যে একেবারেই চাপা পড়ে গিয়েছে হিজাব বিতর্ক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরার বিরুদ্ধে আইন জারি করেছিল কর্ণাটকের বোম্মাই সরকার। যা নিয়ে জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। এই নির্দেশকে রাজনৈতিক চাল বলেই মনে করেছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। কর্ণাটকের ভোটের মরশুমে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারত এই হিজাব বিতর্কই। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, তা নিয়ে একটি কথাও খরচ করলেন না কোনও পক্ষের কোনও নেতাই। মুসলিম তরুণীরা জানাচ্ছেন, কেবল বিজেপি নয়, কোনও রাজনৈতিক দলই তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি, বা এই লড়াইয়ে তাঁদের সমর্থনের আশ্বাস দেয়নি। সব মিলিয়ে হেভিওয়েট ভোটের ময়দানে একরকম ব্রাত্যই থেকে গেলেন মুসলিম মেয়েরা।