দেশজুড়ে বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে অসহিষ্ণুতার পরিবেশ। ফের সেই তালিকায় নয়া সংযোজন ঘটাল হরিয়ানা। হরিয়ানার একটি এলাকা সিদ্ধান্ত নিল, মুসলিম দোকানি ও বিক্রেতাদের সম্পূর্ণভাবে বয়কট করা হবে। কেন এমন সিদ্ধান্তের পথে হাঁটলেন ওই এলাকার বাসিন্দারা? শুনে নেওয়া যাক।
নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে এলাকায় বাস করছে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীরা। রুজির সংস্থানও হচ্ছে এলাকা থেকেই। আর তার দরুন সমস্যায় পড়ছেন স্থানীয় হিন্দুরা। এমন দাবিতেই সম্প্রতি সরব হলেন হরিয়ানার মানেসর এলাকার অধিবাসীদের একাংশ। স্পষ্টতই তাঁদের আক্রমণের অভিমুখ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রতি। এলাকার মুসলিম বাসিন্দাদের দিকেই ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তাঁরা। দাবি করেছেন গুরগাঁও এবং মানেসর অঞ্চলে বাস রয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গাদের, এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের। তাদের এই অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করতে গেলে আর্থিকভাবে বয়কট করাই একমাত্র পথ, এমনটাই মত বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মানেসর শাখার জেনারেল সেক্রেটারি দেবেন্দ্র সিং-এর। সেই প্রস্তাবে শিলমোহর দিয়েছেন এলাকার আরও একাধিক প্রধান ব্যক্তিই।
আরও শুনুন: উদয়পুরের ঘটনা ‘ইসলামের পরিপন্থী’, নিন্দা-প্রতিবাদে সরব দেশের ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা
সম্প্রতি মানেসর এলাকায় একটি পঞ্চায়েতের আয়োজন করা হয়। উদ্যোক্তা ছিল ‘হিন্দু সমাজ’। স্থানীয় মুসলিম দোকানিদের বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই ডাকা হয়েছিল ওই বৈঠক। হিন্দু পরিষদ কিংবা বজরং দলের মতো হিন্দুত্ববাদী দলের সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, হিন্দু নামে দোকানের নাম রেখে, দোকানে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি রেখে সকলকে বিভ্রান্ত করে আসছেন ওই দোকানদারেরা। আদতে এই সবকিছু এক বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ বলেই তাঁদের মত। কী সেই ষড়যন্ত্র? হিন্দুত্ববাদী দলগুলির মতে, ব্যবসা করার জন্য, বা কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ার জন্য ওইসব দোকান খোলা হয়নি আদৌ। এর পিছনে আসলে জিহাদের উদ্দেশ্য রয়েছে বলেই সন্দেহ তাঁদের। তা প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় সংগঠন গড়ে তোলারও ডাক দিয়েছেন হিন্দুত্ববাদী দলের নেতৃত্বরা। পাশাপাশি ডেপুটি কমিশনারের কাছে এই বিষয়টি জানিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের এলাকাছাড়া করার আরজি জানানো হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নিলে ‘হিন্দু সমাজে’র তরফ থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এই বলে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছে ওই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটি।
আরও শুনুন: প্রকাশ্যে ঘনিষ্ঠতা ‘অপরাধ’! ভালবাসার মাশুল দিয়ে বহুবার হেনস্তার শিকার যুগল
বিভিন্ন ইস্যুতে বারবারই দেশজুড়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতা। কখনও রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের বিতর্কিত মন্তব্য, কখনও অন্য ধর্মের মানুষকে নৃশংস অত্যাচার কিংবা হত্যা করার মতো ঘটনা, কখনও আবার ধর্মগ্রন্থ পাঠের মতো আপাত নিরীহ বিষয়কে হাতিয়ার করেই উসকে উঠছে অশান্তি। যার জেরে স্পষ্টভাবেই দু’দলে ভাগ হয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষেরাও। সেই তালিকায় এবার নয়া সংযোজন হরিয়ানার এই ঘটনা।