উন্নয়ন ও পরিবেশরক্ষা। এই দুটি বিষয়কে সমান্তরাল ভাবে গুরুত্ব না দিলে পৃথিবী পড়বে বিপদে। কোনোটিকেই পিছনে রেখে সভ্যতার অগ্রগতি সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে সামনে এল ২০২০-২১ বর্ষে গাছ কাটার পরিসংখ্যান। সরকারি পরিসংখ্যান মতে, প্রায়৩১ লক্ষ গাছ কাটতে হয়েছে এই সময়পর্বে। সমসংখ্যক গাছ কি ফিরিয়ে দেওয়া হল প্রকৃতিকে? এক্ষেত্রে কী বলছে পরিসংখ্যান? আসুন শুনে নিই।
উন্নয়নের খাতিরে গাছ কাটতেই হয়। তবে তা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে এবং অনুমোদন সাপেক্ষেই। সবদিক রক্ষা করেও যত সংখ্যক গাছে কোপ পড়ে, তা কিন্তু যথেষ্ট উদ্বেগজনক। গত ২০২০-২১ সময়পর্বে আমাদের দেশে উন্নয়নের খাতিরে প্রায় কাটা হয়েছে ৩১ লক্ষ গাছ। বা বলা যায়, বাধ্য হয়েই কেটে ফেলতে হয়েছে এত সংখ্যক গাছ। সম্প্রতি লোকসভায় এই তথ্য জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব।
আরও শুনুন: যোগ দিতে চান সেনাবাহিনীতে, চাকরি শেষে রোজ ১০ কিমি দৌড়ে প্র্যাকটিস তরুণের
মূলত জনস্বার্থমূলক প্রকল্পের জন্যই এই গাছগুলি কাটা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির যে নির্দিষ্ট নিয়মাকানুন আছে, এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আদালতের যা নির্দেশিকা তা মান্য করা হয়েছে। একই সঙ্গে বনসংরক্ষণ আইন অনুসরণ করে এই ধরনের কাজে যে অনুমতি লাগে, তাও আগে থেকে নিয়ে রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের পরই উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এই গাছগুলি কাটা হয়েছে। এই তালিকায় শীর্ষে আছে মধ্যপ্রদেশ। ১৬ লক্ষের কিছু বেশি গাছ কাটা হয়েছে সেখানে। দ্বিতীয় স্থানে আছে উত্তরপ্রদেশ, সেখানে কাটা পড়েছে ৩ লক্ষের বেশি গাছ। তৃতীয় স্থানে আছে ওড়িশা, ২ লক্ষের বেশি গাছ সেখানে কাটা হয়েছে।
আরও শুনুন: উচ্চতা ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি, তাতেই বেসামাল পুরুষসঙ্গীরা! আজব সমস্যায় বিশ্বের সবথেকে লম্বা মডেল
পাশাপাশি প্রশ্ন জাগে, সমসংখ্যক গাছ কি লাগানো হয়েছে? এ প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছেন মন্ত্রী। জানিয়েছেন, একই সময়পর্বে ৩৬ লক্ষ বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। তার জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫৯ কোটি টাকা। বনসৃজনে খরচের নিরিখে শীর্ষে আছে গুজরাট। উত্তরাখণ্ড এবং হরিয়ানাও এ ব্যাপারে যথেষ্ট এগিয়ে। তবে সরকারি এই তথ্য পরিসংখ্যানের বাইরেও যে বেআইনি ভাবে বৃক্ষচ্ছেদন করা হয়, সেই বাস্তবকেও অস্বীকার করা যায় না। যেমন মহারাষ্ট্রেই গত চার বছরে ২ লক্ষের বেশি গাছ কাটা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে কয়েক হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে সে রাজ্যের সরকারের কাছে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব থাকরেই এক প্রশ্নের উত্তরে এই তথ্য পেশ করেছেন।
আরও শুনুন: বাঙালির প্রিয় মিষ্টি ল্যাংচা, কিন্তু কেন তার এমন নাম?
পরিবেশরক্ষা ও উন্নয়ন পরস্পরের বিরোধী নয়। নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চললে, এই ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব। সারা পৃথিবীতেই এই মুহূর্তে দূষণ এক অতিকায় রাক্ষস, যার কবলে পড়ছে মানবসভ্যতা। কার্বন নিঃসরণকে শূন্য করা অর্থাৎ নেট-জিরো প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতেও নানা চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের দরুণ ইতিমধ্যেই প্রকৃতিতে নানা বেচাল ঘটনা ঘটছে। তা যেন আগামিদিনে আরও ভয়ংকর না হয়ে ওঠে, সেই চেষ্টাই চলছে বিশ্ব জুড়ে। উন্নয়নের গতি স্তব্ধ করা সম্ভব নয়। তবে পাশাপাশি বনসৃজনে যথেষ্ট জোর দিলেই দূষণের গ্রাস থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি। আর এ ব্যাপারে সরকারি প্রকল্পের পাশাপাশিও যা জরুরি তা হল মানুষের সচেতনতা ও পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা। একমাত্র তাই-ই হয়ে উঠতে পারে পরিবেশের রক্ষাকবচ।