অশান্ত বাংলাদেশ। চরমে পৌঁছেছে সংখ্যালঘু নির্যাতন। বাধ্য হয়েই স্বদেশ ছেড়ে পালিয়ে আসছেন ওপার বাংলার হিন্দুরা। বেশিরভাগই, নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিচ্ছেন ভারতকে। তবে এমনটাই যে হবে, তা আগেভাগে জানিয়েছিলেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক কী বলেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
জেলে যেতেও আপত্তি নেই, রাস্তায় থাকতেও নেই সমস্যা, গাছের তলায় দিনের পর দিন কাটিয়ে দিতে চাইছেন কেউ কেউ। সম্প্রতি, ঠিক এমনই পরিস্থিতি ভারত-বাংলদেশ সীমান্তে। অনুপ্রবেশের যাবতীয় ঝুঁকি জেনেও, এদেশেই পালিয়ে আসছেন ওপার বাংলার নির্যাতিত সংখ্যালঘুরা।
অবশ্য আর উপায়টাই বা কী! প্রাণে বাঁচতে তো হবে! স্বদেশের অবস্থা দেখে অনেকেই সাহস পাচ্ছেন না, নিশ্চিন্তে বসে থাকার। ভারত সীমান্তে দাঁড়িয়ে একথা নিজে মুখেই স্বীকার করছেন কেউ কেউ। প্রত্যকের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। প্রাণ হাতে নিয়ে দৌড়ে-সাঁতার কেটে এপার বাংলায় আশ্রয় খুঁজতে এসেছেন এঁরা। নিজের দেশে নিরাপত্তা হারিয়ে ‘বন্ধু’ ভারতের মুখাপেক্ষী এইসব অত্যাচারিত হিন্দুরা। আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে প্রবেশ করতেই মরিয়া হয়ে উঠছেন সকলে। কিন্তু বিনা অনুমতিতে সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে প্রবেশ আইনত অপরাধ। তাই সীমান্তেই আটক হচ্ছেন সকলে। এরপর ঠিকানা হবে গারদের ওপারে, তাও ভালোমতো জানেন সবাই। তবু ঠায় দাঁড়িয়ে থাকছেন ভারতের মাটিতে। যতই নিজের দেশ হোক, ওপারে মৃত্যুভয়, তাই ফেরার ইচ্ছা নেই কারও। সম্প্রতি, ত্রিপুরা সীমান্তেই এমন কাণ্ড ঘটেছে। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা দশজনের একটি দলকে আটকায় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী। দলের প্রত্যেকেই দাবি করেন, জেল থাকতে আপত্তি নেই, কিন্তু স্বদেশে আর ফিরবেন না। বড়রা তো বটেই, খুদেরাও পালিয়ে আসতে চাইছে ভারতে। সম্প্রতি এক নাবালিকা ১১ কিমি পায়ে হেঁটে ভারত সীমান্তে পৌঁছয়। সীমান্তেই তাকে আটকানো হয়। জানা যায়, এমনটা করতে তার পরিবারই ইন্ধন জুগিয়েছে। কারন, সেখানে থাকলে আর প্রাণে বাঁচা হত না মেয়েটির। দোষ বলতে, বাংলদেশ ইসকনের সঙ্গে যুক্ত থাকা। সেই ‘অপরাধেই’ বিগত কয়েকদিন ধরে লাগাতার হুমকি সহ্য করতে হয়েছে তার পরিবারের সকলকে। দুস্কৃতিরা সাফ জানিয়ে দেয়, এবার অই নাবালিকাকে প্রাণে মারা হবে। তাই ভোরের আলো ফোটার আগেই মেয়েকে সীমান্তের রাস্তা দেখিয়ে দেয় তার বাবা-মা। কেউ সঙ্গে ছিল না, একা একা মাঠের মধ্যে দিয়ে ছুটে সীমান্তে পৌঁছয় মাত্র ১৭ বছরের অই নাবালিকা। তার চোখে মুখে স্রেফ একটাই, আরজি, ‘আমি বাঁচতে চাই’!
বিগত কয়েকদিনে এমন কতশত ঘটনার সাক্ষী হচ্ছেন সীমান্ত রক্ষীরা! তবে এমনটা যে অস্বাভাবিক কিছু নয়, তা আগেভাগেই জানিয়েছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার এক অনুষ্ঠানে, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এই অনুপ্রবেশ ইস্যুর কথা বলেন অভিজিৎ। তাঁর কথায়, ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশকেই বাংলাদেশের অত্যাচারিত সংখ্যালঘুরা নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে বেছে নেবেন এটাই স্বাভাবিক। যার প্রাথমিক কারন অবশ্যই ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। তাছাড়া, সামাজিক কারনও রয়েছে। নোবেলজয়ী অর্তনীতিবিদের পর্যবেক্ষন, এদেশে হিন্দুরা কিছুটা হলেও অধিক গুরুত্ব পান। তাই ভারত পালিয়ে আসাই একমাত্র পথ হিসাবে মনে করছেন বাংলাদেশের হিন্দুরা। তবে এই ধরনের ঘটনা, অর্থাৎ বাংলাদেশে যে অরাজকতা দেখা দিয়েছে তার নিন্দাও করেছেন অভিজিৎ। বর্তমানে তাঁর সেই আশঙ্কার কথাই যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। তবে দুই দেশের জন্যই এই অনুপ্রবেশ সমস্যার হবে, তা মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।