চেষ্টার খামতি রাখেননি। ফাঁক ছিল না পরিশ্রমেও। তবু চাকরি অধরা মাধুরী হয়েই থেকে গিয়েছে। বছরের পর বছর কেটেছে, তাও। অবশেষে ক্লান্ত যুবক নিজেকে মৃত ঘোষণা করলেন। সমাজমাধ্যমে নিজেই জানালেন সে কথা। তাতে কী প্রতিক্রিয়া নেটদুনিয়ার?
একটা ছবি। নীচে লেখা জন্ম-মৃত্যুর তারিখ। পোস্ট করা হয়েছে জনপ্রিয় সোশাল মাধ্যমে। এমনটা যে খুব অস্বাভাবিক, তা নয়। তবে এক্ষেত্রে এক নয়, অস্বাভাবিক ভাবার বেশ কয়েকটা কারণ রয়েছে। প্রথমত ওই মৃত্যু সংবাদ যাঁর সম্পর্কে, তিনিই পোস্টটি করেছেন। এবং মৃত্যুর কারণ হিসেবে দাবি করেছেন, চাকরি না পাওয়ার হতাশা।
আকালের বাজারে চাকরি হারানো নতুন কিছু নয়। কখনও দুর্নিতী কখনও আবার অন্য কোনও কারণে অহরহ বেকার হতে হচ্ছে অনেককে। এই তালিকা কতশত ‘যোগ্য’ রয়েছেন, তার হিসাব করা কঠিন। বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরি হারানোর হারটা তুলনায় বেশি। বিশেষ করে কোভিড অতিমারির পর বিষয়টা একপ্রকার স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে বলেই মনে করেন অনেকে। তার স্বপক্ষে প্রমাণও অনেক রয়েছে। এরপর বাজারে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তাতেও নাকি চাকরি গিয়েছে অনেকের। এমনই কোনও এক কারণে চাকরি হারিয়েছিলেন প্রশান্ত হরিদাস। বেঙ্গালুরুর যুবক, চাকরি করেই সংসার চলে, কাজেই সময় নষ্ট না করে নতুন চাকরির খোঁজে লেগে পড়েন। একের পর এক ইন্টারভিউ, নিজের যোগ্যতা বাড়াতে নতুন কোর্সে ভর্তি হওয়া, সবই করেছেন প্রশান্ত। জনপ্রিয় সোশাল মাধ্যম লিঙ্কডিনে বেশ সক্রিয় ছিলেন। আসলে, এই প্ল্যাটফর্ম নতুন চাকরির হদিশ দেয়। ভালো করে খুঁজলে নাকি চাকরি পাওয়া জলভাত। তবে প্রচলিত এই ধারণা প্রশান্তের ক্ষেত্রে সত্যি হয়নি। দীর্ঘ ৩ বছর পরিশ্রম করেও একটা চাকরি জোটাতে পারেননি তিনি। তাই ক্লান্ত, অবসন্ন হইয়ে চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এতদূর শুনে মনে হতেই পারে, তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। আপাতভাবে প্রশান্তের পোস্ট দেখেও সেকথা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু আদতে এমন কিছু করেননি প্রশান্ত। স্রেফ জানিয়েছেন তিনি ‘মৃত’। নিজের ছবি সাজিয়ে ওবিচুয়ারি পোস্ট করেছেন, সেই লিঙ্কডিনেই। তবে ছবির সঙ্গে জুড়েছেন বিশেষ বার্তাও। আসলে, এই পোস্টের মাধ্যমে সমাজের নগ্ন রূপটা সবার সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন প্রশান্ত। এ সমাজ চাকরিহারাদের অপরাধীর চোখে দেখে, এমনটাই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বুঝে তিনি। অথচ তিনি চেষ্টার কোনও খামতি রাখেননি, সব ভুলে নিজের সবটুকু উজাড় করে চাকরি খোঁজার দৌড়ে ছুটেছেন। তাই সেই জীবন থেকে বিরতি চান প্রশান্ত। তাঁর মতো আরও যারা চাকরি খোঁজার দৌড়ে নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছেন, তাঁদের কাছে নিজেকে মৃত বলে ঘোষণা করেছেন প্রশান্ত। কাউকে ছোট করা বা অবহেলা করার তাঁর উদ্দেশ্য নয়, স্রেফ প্রাণখুলে বাঁচার জন্য এমনটা করেছেন বলে দাবি প্রশান্তের। আত্মহত্যা মহাপাপ, একথা তিনি জানেন। তাই এমন চেষ্টা তিনি করবেন না। বাঁচবেন বাঁচার মতো করে। শুধুমাত্র চাকরি খোঁজাই জীবন, এমনটা আর মানতে চান না প্রশান্ত।