ধর্ষণের হার যত বাড়ছে, ততই উঠছে ধর্ষকদের কঠোর শাস্তির দাবি। আর সেখানেই নির্যাতিতাদের আশার আলো দেখাচ্ছে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। কী হারে শাস্তি হচ্ছে এই বিশেষ আদালতে? শুনে নেওয়া যাক।
আর জি করে কর্মরতা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় নতুন করে কড়া আইনের দাবি উঠেছে। একইভাবে নির্ভয়া কাণ্ডের জেরেও উঠেছিল কড়া আইনের দাবি। ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে কড়া আইন আনা হোক, যাতে ধর্ষকদের কড়া শাস্তি দেওয়া যায় এবং তার জেরে এই ধরনের অপরাধ করার আগে কেউ ভয় পায়- এই যুক্তিতেই কঠোর আইনের পক্ষে সওয়াল ওঠে। সেই আইন লাগু করার জন্য বিশেষ আদালত গড়ার দাবিও বারে বারে এসেছে, যেখানে দ্রুত ধর্ষণ বা নির্যাতনের মতো অপরাধের বিচার করা যাবে। এই বিশেষ আদালতগুলিই ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। নৃশংসতার বিচারে যেসব অপরাধ মাত্রাছাড়া, সেইসব অপরাধের মামলাগুলি দিনের পর দিন আদালতে ঘোরার বদলে নির্যাতিতার বিচার মিলুক দ্রুত, এই আশাতেই ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের ভাবনা। আর সাম্প্রতিক সময়েই এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষা জানাল, দ্রুত বিচার দেওয়ার প্রেক্ষিতে নির্যাতিতাদের আশা জোগাচ্ছে এই ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টগুলি।
২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট পদ্ধতির প্রবর্তন হয়। ধর্ষণ এবং শিশুদের ওপর যৌন অত্যাচার অর্থাৎ পকসো মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে এই বিশেষ আদালতগুলি তৈরি। এর পাঁচ বছর পরে এসে দেখা যাচ্ছে, ধর্ষণ-নির্যাতনের বিচারের ক্ষেত্রে অন্যান্য আদালতের তুলনায় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টগুলি অনেক বেশি দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। ২০২২ সালে যতগুলি নির্যাতনের মামলা দায়ের হয়েছিল, তার ৮৩ শতাংশের নিষ্পত্তি হয়েছে এই শ্রেণির আদালতে। ২০২৩ সালে সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ শতাংশে। আরও বড় কথা, ২০১৯ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে যত মামলা এসেছে, তার ৫২ শতাংশ মামলার রায় ইতিমধ্যেই প্রকাশিত। এই দ্রুততার নিরিখে সব রাজ্যের মধ্যে শীর্ষে আছে মহারাষ্ট্র। সেখানে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার হার ৭৯.৫ শতাংশ। ধর্ষণ ও পকসো কেসে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে দ্রুত বিচার দেবার তালিকায় সবার শেষে আছে পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্যের ক্ষেত্রে ওই নিষ্পত্তি হওয়া মামলার হার ১.৬ শতাংশ।
যেখানে আদালতের ক্ষেত্রে তারিখ পে তারিখ প্রবাদ সকলেরই জানা, সেখানে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির গুরুত্ব যে কতখানি, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতিই কেন্দ্রীয় রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, হাই কোর্টে প্রায় ৬২ হাজার মামলা ৩০ বছর ধরে বিচারাধীন। প্রায় ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে, এমন একাধিক মামলারও নিষ্পত্তি হয়নি এখনও পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় ভিজিলেন্স কমিটির রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, সিবিআই তদন্তের পরও ৬৯০০ দুর্নীতি মামলার ফয়সলা বাকি রয়েছে দেশের বিভিন্ন আদালতে। এই পরিস্থিতিতে ধর্ষণের মতো নারকীয় ঘটনার বিচারও সহজে মেলে না। আর ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট সেখানেই গুরুত্বপূর্ণ।