খিদের জ্বালায় নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করে দিচ্ছে পরিবার। হ্যাঁ, শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও সত্যি। সম্প্রতি সামনে এসেছে এমনই মর্মান্তিক খবর। অন্য কোথাও নয়, খোদ ভারতের বুকেই ঘটেছে এমন ঘটনা। কী ঘটেছে ঠিক? শুনে নেওয়া যাক।
তীব্র দারিদ্র্যের কোপ পড়েছে সংসারে। খাবারের সংস্থানটুকুও নেই। এই অবস্থা থেকে রেহাই পেতে নিজের সন্তানকেই বিক্রি করে দিচ্ছে একাধিক পরিবার। অনেক ক্ষেত্রে মাকে অন্ধকারে রেখেই ঘটে যাচ্ছে এহেন লেনদেন। আশ্চর্য লাগলেও সত্যি, এ দেশের বুকেই ঘটছে এমন মর্মান্তিক কাণ্ড। বিগত ৩-৪ দিনের মধ্যেই এমন দুটি ঘটনার কথা সামনে এসেছে বলে খবর।
আরও শুনুন: অপুষ্টির জেরে ১৩,০০০ নবজাতকের মৃত্যু আফগানিস্তানে, উদ্বিগ্ন বিশ্ব
তালিবান দখল নেওয়ার পর বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে সন্তান বিক্রি করে দেওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে এমন ভয়ংকর পথই বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন সেদেশের অনেক মানুষ। কিন্তু এবার এমন ঘটনা ঘটল খোদ ভারতেই। শোনা গিয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশের একাধিক গরিব মহিলা এই পথ বেছে নিয়েছেন। তার মধ্যে এলুরু এবং মঙ্গলাগিরি জেলায় দুটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে গত কয়েকদিনের মধ্যে। বিক্রি হয়ে যাওয়া সন্তানের মায়েদের বক্তব্য, সন্তানের দেখভাল করার মতো সামর্থ্য নেই তাঁদের। আর সেইজন্যই এহেন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁদের পরিবার।
শিশু সুরক্ষা বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এর আগেও নিঃসন্তান দম্পতিরা বেআইনিভাবে সন্তান দত্তক নিচ্ছেন অথবা অন্য কারও থেকে সন্তান কিনে নিচ্ছেন, এমন অভিযোগের কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু এখন কোনও দল কার্যত শিশু বিক্রির বাজার বসিয়ে দিয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ-তেলেঙ্গানা সীমান্তের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিন দিন বয়সি পুত্রসন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছে তার পরিবার। জানা গিয়েছে, এক চিকিৎসকের কাছেই ২ লাখ টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে বিক্রি করে দিয়েছে তার বাবা এবং ঠাকুমা। সেখান থেকে বিশাখাপত্তনমের এক দম্পতির কাছে ৩ লাখ টাকায়, এবং শেষমেশ ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে আরেক দম্পতির কাছে হাতবদল হয়েছে শিশুটির। বস্তুত হাতবদলের প্রতি পর্যায়ে শিশুদের দাম বাড়ছে বলে খবর। ওই চিকিৎসকই তাঁকে এই হাসপাতালে প্রসব করাতে রাজি করিয়েছিলেন বলে অভিযোগ নবজাতকের মায়ের।
আরও শুনুন: রুশ হানায় যদি মৃত্যু হয়! ভয়ে সন্তানের পিঠে নাম-ঠিকানা লিখে রাখছেন ইউক্রেনবাসী
এদিকে মঙ্গলাগিরিতে এক শ্রমিক তার তৃতীয় সন্তান তথা একটি শিশুকন্যাকে বিক্রি করে দিয়েছে। দু-মাস বয়সের শিশুটির প্রাথমিক দাম ছিল ৭০ হাজার টাকা, হাতবদলের শেষ পর্যায়ে তার দাম গিয়ে পৌঁছয় আড়াই লাখে। এই কেসটিতে এখনও পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দু-মাস আগে এমনই আরেকটি বিক্রি হয়ে যাওয়া শিশুকন্যাকেও উদ্ধার করেছেন নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের আধিকারিকেরা।
আপাতত স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের উচ্চ আদালত। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, তা-ই নিশ্চিত করতে চাইছেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা।