দেশজুড়ে মাঝে মাঝেই উসকে উঠছে সাম্প্রদায়িক অশান্তির আঁচ। কেবল ভিন্ন মতের প্রতি অসহিষ্ণুতাই নয়, অন্য মানুষের খাদ্যাভ্যাস, পোশাক পরিচ্ছদ, ধর্মাচরণের মতো একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়গুলি নিয়েও অপছন্দ জানানো হচ্ছে কখনও কখনও। যার জেরে অশান্তি বাড়ছে আরও। সম্প্রতি তেমনই ঘটনা দেখা গেল অরুণাচল প্রদেশে। এবার ফতোয়ার মুখে পড়ল খাদ্যাভ্যাস। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিশ্বের দরবারে ভারতের পরিচয় বৈচিত্র্যময় দেশ হিসাবেই। অন্যান্য বিষয়ের মতো খাবারদাবারের ক্ষেত্রেও সেই বৈচিত্র্যের ছোঁয়া ধরে রেখেছে এই দেশ। আর সেই বিচিত্র খাদ্যাভ্যাসের কথা মাথায় রেখেই দেশজুড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রেস্তরাঁ। স্থানীয় ডেলিকেসি তো বটেই, তা ছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন কুইজিনের স্বাদ জানায় সেইসব রেস্তরাঁ। এবার সেই ভিন্নতার মূলেই যেন একপ্রকার আঘাত করল অরুণাচল প্রদেশে জারি হওয়া একটি নিষেধাজ্ঞা। সে রাজ্যের নাহারলগুন জেলার সমস্ত রেস্তরাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের সাইনবোর্ড থেকে মুছে ফেলতে হবে ‘বিফ’ অর্থাৎ গোমাংস শব্দটি। অন্যথায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে সে রাজ্যের সরকার। আসলে গোমাংস নিষিদ্ধ করার আগের পদক্ষেপ হিসেবেই জারি হয়েছে এহেন ফতোয়া, এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও এ প্রসঙ্গে নাহারলগুন জেলার কার্যনির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তামো দাদা-র পালটা দাবি, আসলে সংবিধানে উল্লিখিত ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’-কে বজায় রাখতে চেয়েই নেওয়া হয়েছে এহেন সিদ্ধান্ত।
আরও শুনুন: শপিং মলের ভিতরে নমাজ পড়ার জেরে দায়ের মামলা, পালটা দাবি হনুমান চালিশা পাঠেরও
আসলে অনেক রেস্তরাঁর সাইনবোর্ডেই সংক্ষেপে তার বিশেষত্ব লেখা থাকে। কোন রেস্তরাঁ আমিষ বা নিরামিষ, আবার কোথায় কোন বিশেষ স্থানের খাবার মেলে, তা লেখা থাকে সেখানে। যা দেখে খাদ্যপ্রেমীরা অনায়াসেই পছন্দের রেস্তরাঁটিকে বেছে নিতে পারেন। আবার অপছন্দের খাবার হলে, বা কেউ কোনও বিশেষ ধরনের খাবার না খেলে, সেক্ষেত্রে সেই রেস্তরাঁটি এড়িয়ে যাওয়াও সহজ হয়। সেইমতোই, ওই রাজ্যের অনেক হোটেল ও রেস্তরাঁর বোর্ডে উল্লেখ করা রয়েছে, সেখানে গোমাংস পাওয়া যায় কি না। ধর্মের কারণে যাঁরা গোমাংস এড়িয়ে চলেন, তাঁদের সতর্ক করার জন্য অনেক রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষই এ কথা আগেভাগে ঘোষণা করে থাকেন। কিন্তু সেই ঘোষণাই যে বুমেরাং হয়ে যাবে, তা বোধহয় আঁচ করতে পারেননি অরুণাচল প্রদেশের ওই রেস্তরাঁ মালিকেরা। সম্প্রতি জারি হওয়া বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়েছে, এহেন ঘোষণা সমাজের এক অংশের মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানতে পারে। আর তার জেরে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন মনোভাবও উসকে উঠতে পারে। এই পরিস্থিতিতে তাই এ জাতীয় ঘোষণা না করার ফরমান জারি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসের ১৮ তারিখের মধ্যেই রেস্তরাঁগুলিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় ২০০০ টাকার জরিমানা লাগু হতে পারে, এমনকি খারিজ হয়ে যেতে পারে লাইসেন্সও।
আরও শুনুন: ‘বিফ কারি’-র ছবিতে আপত্তি জানিয়ে বিপাকে পুলিশ, চাপের মুখে চাইতে হল ক্ষমাও
গোমাংস নিয়ে এর আগে কম অশান্তি প্রত্যক্ষ করেনি দেশ। বেশ কয়েক বছর আগে গোমাংস রাখার অভিযোগে উত্তরপ্রদেশে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল। গত মে মাসেই গোমাংসে আপত্তি জানিয়ে বিতর্ক বাড়িয়েছিলেন তামিলনাড়ুর এক ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর। এমনকি কিছুদিন আগেই চেন্নাইয়ের এক বাসিন্দা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিশেষ পদের ছবি পোস্ট করেছিলেন। কিন্তু ছবিটির ক্যাপশনে ‘বিফ কারি’ কথাটি লেখার জেরে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের হুঁশিয়ারির মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। এবার সেই বিতর্কের তালিকায় নয়া সংযোজন অরুণাচল প্রদেশের এই ঘটনা।