একসময় রুজি রোজগারের জন্য সাধারণ শ্রমিকের কাজও করতে হয়েছে তাঁকে। সেখান থেকে আজ তিনি দেশের অন্যতম নামী সার্জন। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নিজের শিকড়কে ভুলে যাননি তিনি। আর তাই, নিজের সেই প্রত্যন্ত গ্রামকে একটি বিশ্বমানের স্কুল উপহার দিয়েছেন এই ব্যক্তি, যেখানে বিনামূল্যেই পড়াশোনা করতে পারবে ছেলেমেয়েরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক তাঁর কথা।
একজন সামান্য শ্রমজীবী মানুষ থেকে নিজের জোরেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন নামী চিকিৎসক। তাঁর জীবনের অভিমুখই বলে দেয়, নিঃসন্দেহে প্রচুর ঝড়-ঝাপটা পেরোতে হয়েছে তাঁকে। তারপর এসেছে সাফল্য। খুব কম সংখ্যক মানুষই আছেন, যাঁরা নিজের সাফল্যকে, নিজের জ্ঞান-বুদ্ধিমত্তা, নিজের সারা জীবনের অর্জনকে বাঁচিয়ে রাখতে জানেন। শুধু নিজের মধ্যে দিয়ে নয়, তাঁর মতো আরও অনেকের মধ্যে দিয়ে। সেইরকমই একজন মানুষ ডঃ প্রদীপ শেঠি। যিনি তাঁর এই সাফল্যকে অন্য আরও অনেকের সাফল্য বানানোর জন্য ফিরে গিয়েছেন তাঁর ছেলেবেলার গ্রামে। একজন সফল মানুষ হিসেবে- যারা জীবনে সাফল্য পেতে চায়, তাঁদের অবলম্বন হতে চেয়েছেন। সমাজের ওপর থেকে তুলে ফেলে দিতে চেয়েছেন অর্থনৈতিক বাধার বিশাল পাথরটাকে। সেই বদল আনার চেষ্টাতে শামিল হয়েছেন গ্রামবাসীরাও। তাঁর স্কুল গড়ে তোলার জন্য জমি দান করেছেন অনেকেই। আপাতত ১০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে ডঃ শেঠীর স্বপ্নের ‘উৎকল বঙ্গ’ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।
আরও শুনুন: যন্ত্রণার দৃশ্য! শহিদ জওয়ানের চিতার উপর শুয়ে পড়লেন স্ত্রী, কেঁদে আকুল গোটা গ্রাম
দিল্লি এইমস-এ ডাক্তারি পড়া শেষ হওয়ার পর, প্রায় বছর ১৫ প্র্যাক্টিস করেছেন ডঃ শেঠি। অভিজ্ঞতার সাথে সাথে, হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন হিসেবে গোটা দেশে খ্যাতিও অর্জন করেছেন। তারপর, ২০২৩ সালের ৪ঠা মার্চ, তিনি একটি দাতব্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলেন। ওড়িশার কেওনঝড় জেলার, বেরুনাপাড়ি গ্রামে। এই বেরুনাপাড়ি গ্রামেই ছেলেবেয়ায় শ্রমিকের কাজ করতে হয়েছিল আজকের ডঃ প্রদীপ শেঠিকে। এখন, তাঁর গ্রামের ছেলেমেয়েরা তাঁর তৈরি স্কুলে নিখরচায় পড়বে, এমনটাই স্বপ্ন তাঁর। তাই উৎকল বঙ্গ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল নামে একটি স্কুল গড়ে তুলেছেন তিনি। নামেই বুঝতে পারছেন, এই স্কুল একটি আন্তর্জাতিক স্কুল। এখানে যাতে দেশের নামী ব্যক্তিত্বদের নিয়ে আসা যায়, সেই স্বপ্নও দেখেন এই চিকিৎসক। তিনি চান, ওড়িশার এই স্কুলের কোনও পড়ুয়া খোদ রবি শাস্ত্রীর থেকে রপ্ত করতে পারবে তাঁর বোলিংয়ের কৌশল। আবার কোনও পড়ুয়া চাইলে গান গাওয়ার পরামর্শ পেতে পারে খোদ সোনু নিগমের কাছ থেকে। হ্যাঁ, নিজের স্কুলের পড়ুয়াদের কাছে এমনই সব খ্যাতনামা মানুষদের এনে দিতে চান এই ব্যক্তি। যাতে তাঁদের কথা শুনে, তাঁদের অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয় পড়ুয়ারা। আর এসবই, মূলত নিম্নবিত্ত পরিবারের বাচ্চাদের জন্য। কারণ এই চিকিৎসক ভোলেননি যে তিনি একটা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসেছেন, যেটা রাজ্যের রাজধানী থেকে প্রায় ১৮০ কিমি দূরে। নিজের সেই শিকড়কে ভুলে যাননি বলেই সেই শিকড়েই সার জোগানোর ব্রত নিয়েছেন ডঃ প্রদীপ শেঠি।