প্রবল প্রসব বেদনা নিয়ে একাই উপস্থিত হয়েছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু নিয়মের দোহাই দিয়ে ভর্তিই নিল না হাসপাতাল। অগত্যা হাসপাতালের সামনের রাস্তাতেই সন্তানের জন্ম দিলেন মহিলা। আর সেই ভিডিও নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য। কোথায় হয়েছে এমন অমানবিক কাজ? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
একা এলে ভর্তী হওয়া যাবে না – এমনই নিয়ম দেখিয়ে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে ভর্তি নিল না সরকারি প্রসূতি হাসপাতাল। বাধ্য হয়ে হাসপাতালের সামনের রাস্তাতেই সন্তানের জন্ম দিলেন তিনি। স্থানীয়দের সহযোগিতাতেই এ যাত্রায় রক্ষা পেল মা ও শিশু। সেই ঘটনারই ভিডিও বানিয়ে নেটমাধ্যমে প্রকাশ করেন জনৈক ব্যক্তি। যা নিমেষের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় এবং ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে নেটিজেনদের মধ্যে।
আরও শুনুন: রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, কাতারে থাকছেন না ‘বিশ্বকাপের হটেস্ট ফ্যান’
ভগবান ভেঙ্কটেশের পবিত্র শহর তিরুপতিতে ঘটেছে এমন অমানবিক ঘটনা। যা রীতিমতো অবাক করছে সকলকে। বিশেষত অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্যই যে হাসপাতাল তৈরি করা, সেখানেই কিনা চিকিৎসা পেলেন না এই মহিলা। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দেশের প্রতিটি শহর বা গ্রামের এই হাসপাতালগুলিতে বিনামূল্যে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা থাকে। তিরুপতিতে অবস্থিত এই সরকারি হাসপাতালটিও কেবলমাত্র প্রসূতিদের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। যেখানে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য ১০০ টি বেডও রয়েছে। সেখানেই প্রসব বেদনা নিয়ে একা হাজির হয়েছিলেন ওই মহিলা। সঙ্গে বাড়ির কোনও আত্মীয় বা পরিচিত কেউই ছিল না। কোনওরকমে হাসপাতালে পৌঁছে তাঁকে ভর্তি নেওয়ার জন্য অত্যন্ত কাতরভাবে অনুরোধ করেন ওই মহিলা। কিন্তু সেই মুহুর্তে দায়িত্বে থাকা হাসপাতাল কর্মীরা সাফ জানিয়ে দেন – একা এলে ভর্তী হওয়া যাবে না। অগত্যা শরীরে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন মহিলা। এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ছটফট করতে করতে হাসপাতালের সামনের রাস্তায়, মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালের সামনের রাস্তায় তাঁকে ওভাবে পড়ে যেতে দেখে ছুটে আসেন স্থানীয়রা। তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেন মহিলার প্রসব করানোর। কোনওরকমে চাদর দিয়ে ঢেকে রাস্তার মাঝেই প্রসব করানো হয় মহিলার। পাশে থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কিছু কর্মীও সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। তাঁদের মধ্যেই কেউ গোটা ঘটনা মোবাইলবন্দী করেন। যা পরে নেটমাধ্যমে প্রকাশ পেতেই, ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
আরও শুনুন: ফুলে সাজানো গাড়িতে নয়, কফিনে চড়ে বিয়ের আসরে এলেন বর
ঘটনার গোটা বিবরণ শোনার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয়রাও। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা হাসপাতালে গিয়ে, রীতিমতো বিক্ষোভ দেখাতে আরম্ভ করেন। চাপের মুখে পড়ে একরকম বাধ্য হয়েই, মা ও সদ্যোজাতকে হাসপাতালে ভর্তি নেন কর্তৃপক্ষ। তবু ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ঘটনার কথা জানতে পারেন তিরুপতি জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্রীহরি। তিনি তৎক্ষণাৎ ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হওয়ার আশ্বাসও দেন। তিনি বলেন, এরপর থেকে যে কোনও অবস্থাতেই কোনও অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে ভর্তি নিতে বাধ্য থাকবে সরকারি হাসপাতাল। এমনকি রোগী একা এলেও ভর্তিতে কোনও সমস্যা হবে না।