লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর সংবিধানে মাথা ঠেকিয়েছেন মোদি। একইভাবে সাংবাদিক সম্মেলনে সংবিধানের ‘পকেট এডিশন’ নিয়েই হাজির হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। সবমিলিয়ে লোকসভা নির্বাচনে বিভিন্ন ভাবে সংবিধানের প্রসঙ্গ ওঠে। আর তাতেই রাতারাতি বিক্রি বেড়ছে সংবিধানের! আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দেশের সংবিধানই বদলে ফেলতে চায় বিজেপি। বারে বারেই এই অভিযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। লোকসভা ভোটের প্রচারেও অন্যতম হাতিয়ার ছিল এই সংবিধান। তবে সাধারণ মানুষও যে লোকসভা ভোটের আবহে নতুন করে সংবিধানে মজেছেন, তা জানা গেল বই বিক্রির বহর দেখে।
আরও শুনুন: অপমান গিলছে না পাঞ্জাব, কুলবিন্দরের পাশে দাঁড়িয়ে কঙ্গনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের আইনজীবীদের
গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ সংবিধান। তাই নির্বাচনের মতো গণতন্ত্রের উৎসবে সংবিধানের প্রসঙ্গ ফেরাই স্বাভাবিক। তবে ২৪-র লোকসভা নির্বাচনে যেন সংবিধানকেই স্টার ক্যাম্পেনার বানিয়ে দিয়েছিলেন রাজনৈতিক নেতারা। একদিকে বিরোধী পক্ষের অভিযোগ, ক্ষমতায় এলে সংবিধান বদলে দেবে বিজেপি। অন্যদিকে মোদি সরকারের তরফে ক্রমাগত সেসব মন্তব্যের বিরোধিতা। অথচ বিজেপি সরকারের একের পর এক পদক্ষেপ সকলকে ভাবতে বাধ্য করছিল, ক্ষমতা এলে সত্যিই হয়তো সংবিধান বদলাবে মোদি সরকার। বিশেষ করে সিএএ-এনআরসি কিংবা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো আইনের প্রসঙ্গে বারবার এই আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরাও। শুধু তাই নয়, নতুন সংসদ ভবনের যাত্রা শুরুর আবহেই দেখা গিয়েছিল দেশের সংবিধানের এক নতুন রূপ। যেখানে সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে উধাও হয়ে যায় ‘সেকুলার’ ও ‘সোশালিস্ট’ শব্দ দুটি। অর্থাৎ সংবিধানের প্রস্তাবনায় দেশের যে ধর্মনিরপেক্ষ ছবিটিকে দীর্ঘদিন ধরে তুলে ধরা হয়েছে, তা অনেকখানিই পালটে যায় নয়া সংবিধানের বক্তব্যে। এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছিলেন অনেকে। তবে কি সত্যিই সংবিধান বদলে ঘোষিত হিন্দুরাষ্ট্রে পরিনত হবে ভারত? লোকসভার আগে রামমন্দির তৈরি সেই আশঙ্কার মেঘ আরও গাঢ় করে।
আরও শুনুন: কঙ্গনাকে চড়ে কৃষকদেরই রাগের ছাপ! মন্তব্য ভগবন্ত মানের, তাই কৃষকবন্ধু হওয়ার চেষ্টা মোদির?
তবে বিরোধীরা এক চিলতে জমিও ছাড়েননি। বারবার বিজেপির বিরুদ্ধে সংবিধান ইস্যুতে সরব হয়েছেন রাহুলরা। এমনকি লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার দিনেও সাংবাদিকদের সামনে সংবিধানের পকেট এডিশন নিয়েই হাজির হয়েছিল কংগ্রেস নেতা। সবার সামনে সেই বই সাজিয়ে বিশেষ বার্তাও দেন তিনি। আর এসবের প্রভাবেই দেশের আমজনতার সংবিধান সম্পর্কে আগ্রহ বেড়েছে রীতিমতো। এমনিতে সংবিধান পাঠ্য পুস্তকের মতোই পড়তে হয় আইনের পড়ুয়াদের। আধিকাংশ সাধারণ মানুষের সংবিধান সম্পর্কে জ্ঞান বলতে ওই প্রস্তাবনা টুকু, কিংবা আরও কিছুটা। তবে ভোটের অছিলায় এই বই পড়ে দেখতে শুরু করেছেন অনেকেই। সংবিধান মোটেও ছোটখাটো কোনও বই নয়। সবসময় তা সঙ্গে নিয়ে ঘোরাও কঠিন। তাই লখনউ-এর এক প্রকাশক সংস্থা সংবিধানের ‘পকেট এডিশন’ বাজারে আনেন। লম্বায় ২০ সেমি এবং চওড়ায় প্রায় ১১ সেমির এই বই ২০০৯ সালে প্রকাশ করে লখনউ-এর ইস্টার্ন বুক কোম্পানি (EBC)। সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই এমন সংস্করণ প্রকাশের কথা ভাবে EBC। তবে আইনজীবী ছাড়া এই বই নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাতেন না কেউই। প্রকাশের বছরে খুব বেশি হলে ৫০০-৬০০ কপি বিক্রি হয়। পরবর্তী বছর গুলোতেও সেইভাবে বিক্রি বাড়েনি। কিন্তু EBC-র এই পকেট সংবিধান নিয়েই ভোটের সময় দেখা গিয়েছিল রাহুল গান্ধীকে। সাংবাদিক সম্মেলনেও এই বইটিই সবার সামনে রেখেছিলেন তিনি। সম্ভবত সেই কারণে লাল-কালো মলাটের এই বই সাধারণ মানুষের আগ্রহের বিষয় হয়ে ওঠে। ভোটের আবহে চড়চড়িয়ে বিক্রি বাড়ে এই পকেট সংবিধানের। সংস্থার দাবি, লোকসভা নির্বাচনের এই কদিনে মোট ৫০০০ কপি পকেট সংবিধান বিক্রি হয়েছে। যা ২০২৩ সালের মোট বিক্রির সমান। এবং ভোটের ফল ঘোষণার পর বইটি আউট অফ প্রিন্ট। সুতরাং সংবিধান বদল নিয়ে চর্চা হোক না হোক, এই নিয়ে আমজনতার আগ্রহ কমছে না।