দেশের রাষ্ট্রপতি পদে সম্প্রতি নির্বাচিত হয়েছেন দলিত সম্প্রদায়েরই একজন মানুষ। অথচ কেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছানোর অধিকার মিলল না দলিত যাত্রার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে তার আগেই রুখে দেওয়া হল এই শোভাযাত্রাকে। যা নিয়ে কার্যত হতাশ শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া দলিত মানুষেরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
১৯৪৭ সালে যে অস্পৃশ্যতামুক্ত ভারতের স্বপ্ন দেখা হয়েছিল, একশো বছর পর কি সত্যিই তা বাস্তব হবে? এই প্রশ্ন নিয়েই রাজধানী দিল্লির উদ্দেশে পা বাড়িয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হওয়া দলিত মানুষেরা। পাশাপাশি নতুন সংসদ ভবন গড়ে তোলার জন্য বড় অঙ্কের অর্থ সাহায্য করাও তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল। সেইজন্যই দুই ট্রাক ভর্তি এক টাকার মুদ্রা নিয়ে ‘কয়েন যাত্রা’ নামে ওই শোভাযাত্রা শুরু করেছিলেন ৩৫০-এরও বেশি দলিত ব্যক্তি। কিন্তু মাঝপথেই রুখে দেওয়া হল তাঁদের। সাজাহানপুরের কাছে রাজস্থান-হরিয়ানা সীমান্তেই এই শোভাযাত্রার পথরোধ করল পুলিশ। পুলিশের কাছে থাকা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে সাফ জানানো হয়েছে, কয়েন যাত্রাকে আর এগোনোর অনুমতি দেওয়া যাবে না- এমনটাই জানিয়েছেন দলিত সমাজকর্মী তথা এই শোভাযাত্রার অন্যতম উদ্যোক্তা মার্টিন ম্যাকওয়ান।
আরও শুনুন: দেশপ্রেমের বার্তা দিতে অভিনব উদ্যোগ, চোখের মধ্যে জাতীয় পতাকা আঁকলেন ব্যক্তি
কেন্দ্রের এহেন নির্দেশে স্পষ্টতই হতাশ দলিত সম্প্রদায়ের মানুষেরা। কার্যত ক্ষোভ প্রকাশ করেই মার্টিন বলেছেন, ‘দলিতদের দেখলেই সরকার ভাবে যে তারা কিছু চাইতে এসেছে। কিন্তু আমরা ভিক্ষা চাইতে দিল্লি আসার কথা ভাবিনি। বরং সরকারকে অনুদান দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল।’ ওই দুই ট্রাক ভর্তি এক টাকার মুদ্রার মোট মূল্যমান ২০ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া শোভাযাত্রার সামনে রাখা ছিল ১০০০ কেজি ওজনের একটি পিতলের মুদ্রা, যার একদিকে বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর এবং অন্যদিকে গৌতম বুদ্ধের ছবি খোদাই করা ছিল। দলিতদের যেভাবে একঘরে, অচ্ছুত করে রাখে বাকি সমাজ, সেই অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন আম্বেদকর। এদিকে গৌতম বুদ্ধের প্রবর্তিত ধর্মের নীতিও সব মানুষকে সমান চোখে দেখার কথাই বলে। আসলে এই বিষয়টিই সরকারের কাছে উত্থাপন করার কথা ভেবেছিলেন কয়েন যাত্রার উদ্যোক্তারা। যেভাবে এখনও দলিত সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা জারি রয়েছে সমাজে, তা নিয়েই তাঁরা উদ্বিগ্ন। দলিতদের প্রতি হিংসা হানাহানি যদি বেড়েই চলে, তবে এই স্বাধীনতার মর্ম কী- এই প্রশ্নই তুলেছেন তাঁরা। আর সেই কারণেই সরকারের কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি চাওয়ার কথা ভেবেছিলেন এই মানুষেরা। স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে কি দেশ থেকে জাতিভেদ আর অস্পৃশ্যতার বিষ মুছে ফেলা সম্ভব হবে? ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সরকারের কাছে এইটুকুই জিজ্ঞাস্য ছিল তাঁদের। কিন্তু সে প্রশ্নের সামনে দাঁড়ানোর আগেই তাঁদের থামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র।