কংগ্রেসের বিরোধিতার চর্চা আসলে কোনও নির্দিষ্ট, সূচীমুখ পথে চলছে না। আর সেই অবস্থাকেই দিশাহীন বলে তোপ দেগেছেন গৌরব বল্লভ। বিরোধী মুখের সারিতে দাঁড়িয়ে সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখা কি কংগ্রেসের জন্য জরুরি নয়?
দল দিশাহীন, আর তাই দলে থেকে কাজ করাই সমস্যার। আপাতত এই অভিযোগই তাড়া করছে কংগ্রেসকে। সম্প্রতি গৌরব বল্লভের দলত্যাগের ঘটনায় যে অভিযোগে শান পড়ল নতুন করে। কংগ্রেসের অন্যতম সর্বভারতীয় মুখপাত্রের দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া বড় খবর বটে। কিন্তু এই ঘটনার নেপথ্যে যে প্রশ্নগুলি রয়ে গেল, সে কথাও কি খতিয়ে দেখার নয়?
আরও শুনুন:
‘স্মৃতি’ সতত সুখের নয়, তবু পিছু ছাড়ছে না রাহুলের
কংগ্রেসের অবস্থা যতই টালমাটাল হোক না কেন, সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধী মুখ হিসেবে প্রথমেই তার নাম উঠে আসবেই। হাজারও ব্যর্থতা, না-পারা, অভিযোগ সব থাকলেও, শতাব্দীপ্রাচীন দলটিকে পুরোপুরি নাকচ করা যাচ্ছে না এখনও। গোটা দেশ জুড়ে জনসংযোগের জন্য ভারত জোড়ো যাত্রা করে যেমন বিজেপির দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন রাহুল গান্ধী, তেমনই ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম প্রধান মুখ হিসেবে বিজেপিবিরোধিতার সুর চড়াচ্ছে হাত শিবির। কিন্তু, সেই বিরোধিতার ভিত্তি বা গন্তব্য ঠিক কী? এই প্রশ্নই তুলেছেন গৌরব বল্লভ। তাঁর মনে হচ্ছে, কংগ্রেসের বিরোধিতার চর্চা আসলে কোনও নির্দিষ্ট, সূচীমুখ পথে চলছে না। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন ভাবে সে সরব হচ্ছে বটে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে নিটোল একটি বিরোধিতার পথ তাতে নির্মিত হচ্ছে না। আর সেই অবস্থাকে দিশাহীন বলে মনে করছেন গৌরব।
এমনিতে বরাবরই কংগ্রেসের তরফে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন এই নেতা। বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলনের সময় ধারাবাহিকভাবে মোদি সরকারকে তোপ দাগার দায়িত্ব বর্তেছিল তাঁর উপর। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরেও আদানি ও মোদি সরকারের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বারবার সরব হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই গৌরবেরই আপাতত বক্তব্য, দেশের সম্পদ বাড়াচ্ছেন যাঁরা, তাঁদের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলতে পারবেন না তিনি। শুধু তাই নয়, হাত শিবিরের বিরুদ্ধে হিন্দুবিরোধী আচরণের অভিযোগ তুলতেও তিনি ছাড়েননি।
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে গৌরবের এসব কথার অন্য তাৎপর্য ধরাই যায়। কিন্তু তিনি যে বলছেন, কংগ্রেস একদিকে জাতিভিত্তিক জনগণনার কথা বলছে, আবার আরেকদিকে হিন্দুত্বের বিরোধিতা করছে, এ দুইকে একসঙ্গে মেলানো যায় না; সে কথাকে একেবারে নস্যাৎ করা যায় কি? বাস্তবিক, রাজনীতির ক্ষেত্রে দু-নৌকায় পা দিয়ে চলার চেষ্টা কখনও কখনও সমঝোতা হতে পারে বটে, কিন্তু সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে সংশয়ের পথও খুলে যাবেই। কাজ আর কথার মাঝে ফাঁক তৈরি হলে তা দলের অগ্রগতির পক্ষে খুব একটা সহায়ক নয়। সেই ফাঁকের দরুন দলের সাধারণ কর্মী থেকে আমজনতার মধ্যেও যে সংশয় জেগে উঠছে, তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন গৌরব। স্পষ্ট অভিযোগ তুললেন, এর ফলে আদতে দল দুর্বলই হচ্ছে আরও। না ক্ষমতায় আসা, না জোরালো বিরোধিতা, কোনোটি করার মতোই শক্তি সঞ্চয় করে উঠতে পারছে না হাত শিবির।
আরও শুনুন:
যেখানে সোনম ওয়াংচুক নেই, সেখানে পরিবেশ বেশ আছে তো?
দলত্যাগী গৌরব নাহয় অন্য দলে নাম লেখালেন। তবে সেই অজুহাতে তাঁর ক্ষোভকে পুরোপুরি উড়িয়ে না দেওয়াই হয়তো কংগ্রেসের পক্ষে মঙ্গলের। সত্যি বলতে, বিপক্ষের অভিযোগে সারবত্তা থাক বা না থাক, তা খতিয়ে দেখা আসলে নিজেকে যাচাই করার জন্যেই জরুরি। বিজেপির সংগঠিত রাজনীতির বিরোধিতায় শান দিতে হলে, প্রাক্তন কর্মীদের এই সংশয়ের মোকাবিলা করা প্রয়োজন কংগ্রেসের। তাতে তার বিরোধিতার অসংগতিগুলি মিলিয়ে গিয়ে বিরোধিতার পথটিই আরও স্পষ্ট হতে পারে।