সবার আগে দেশের আইন-সংবিধান। রাজনৈতিক মতামত আসুক তারপরে। সম্প্রতি এক সভায় দেশের আইনজীবীদের একথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। ঠিক কোন প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য তাঁর? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আইনের চোখে কালো কাপড় বাঁধা। বরাবরই নিরপেক্ষ বিচারের প্রসঙ্গে এমনটা বলে হয়ে থাকে। দেশের সংবিধানও সেই কথাই বলে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা যেন এর উলটোটা ভাবতে বাধ্য করছে। যার অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে রাজনৈতিক পক্ষপাত। বিশেষ করে কিছু কিছু আইনজীবী তাঁদের রাজনৈতিক মতাদর্শকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সংবিধানই ভুলতে বসেছেন। সম্প্রতি দেশের আইন ব্যবস্থার এই প্রবণতা নিয়েই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
শিয়রে নির্বাচন। ভোটের প্রচারে ব্যস্ত রাজনৈতিক নেতারা। এই আবহে আদালতের একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে তরজা। একইসঙ্গে বিভিন্ন মামলায় আদালতের রায়দান নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যাচ্ছে আইনজীবীদের। মনে করা হচ্ছে, এক্ষেত্রে তাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের কথা বেশি ভাবছেন। এই প্রবনতাই কমানোর কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর কথায়, ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। যে কোনও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে চর্চা চলতেই পারে। তর্ক-বিতর্কেও কোনও বাধা নেই। আইনজীবীরাও অবশ্যই এমনটা করতে পারেন। কিন্তু তাঁদের ক্ষেত্রে দলীয় স্বার্থ সবার আগে প্রাধান্য পাওয়া উচিত না। বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মতে, আইনজীবীদের কাছে সংবিধান সবার আগে থাকবে। আইনের স্থান হবে রাজনীতির উপরে। সেখানে কোনও পক্ষপাতিত্ব রাখা চলবে না। কিন্তু ইদানীং এমনটা মেনে চলছেন কজন? তাই বিচারপতি এই নিয়ে রীতিমতো আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এখানেই শেষ নয়। প্রধান বিচারপতি আরও জানান, দেশের আইন আজকের নয়। এতদিন ধরেই বিচারব্যবস্থা ধারাবাহিক ভাবে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে এসেছে। আইনজীবী বা বিচারপতি সকলেই রাজনীতির থেকে দূরে রেখেছেন নিজেদের। তাই আগামী দিনেও সেই ধারা বজায় থাকুক। এমনটাই চাইছেন বিচারপতি। একইসঙ্গে তাঁর দাবি, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার সঙ্গে আইনজীবিদের স্বাধীনতা জড়িয়ে রয়েছে। সেক্ষেত্রে স্বাধীনতা আইনের শাসন এবং সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থা রক্ষা করাও তাঁদের কর্তব্য। নির্বাচনের আবহে এই মন্তব্য ঘিরে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। ওয়াকিবহাল মহল মএন করছে, দেশকে বাঁচাতেই এহেন মন্তব্য করেছেন বিচারপতি। আসলে, দেশ চালানোর জন্য রাজনীতির যেমন প্রয়োজন, তেমনই দেশের আইনশৃঙ্খলা সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্যও প্রয়োজন নিরপেক্ষতা। তবেই ঠিকমতো এগোবে দেশ। আইনজীবীদের বর্তমান প্রবণতা সেই ধারণা বদলাতে পারে। তাই এই আশঙ্কার কথা মনে করিয়ে আইনিজীবীদের নিরপেক্ষ থাকার কথা বলেছেন বিচারপতি।