ভিনধর্মের তরুণীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। বাড়ি থেকে পালিয়ে তাঁকে বিয়েও করেছেন মুসলিম যুবক। কিন্তু সেই কাজের মাশুল গুনতে হল তাঁর বাবাকে। বিজেপির দীর্ঘদিনের সমর্থক ওই নেতাকে সরাসরি দল থেকেই বহিষ্কার করেছে গেরুয়া শিবির। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন শুনে নিই।
ভিনধর্মের কারও সঙ্গে হিন্দু যুবক বা যুবতির বিয়ে হবে, এ ঘটনাকে মান্যতা দিতে নারাজ গেরুয়া শিবির। এই ধরনের ঘটনাকে ‘লাভ জিহাদ’ বলে বারবারই সুর চড়িয়েছে তারা। মূলত হিন্দু মুসলিম বিয়েকে নিশানা করেই বরাবরই বিরোধিতায় সরব হন বিজেপি নেতারা। তবে সম্প্রতি মুসলিম যুবকের সঙ্গে বৌদ্ধধর্মের এক তরুণীর বিয়েতেও বেজায় চটেছে গেরুয়া শিবির। সরাসরি সেই যুবকের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না নিলেও, শাস্তি পেতে হয়েছে ওই যুবকের বাবাকে।
আরও শুনুন: মুসলিম বা ব্রিটিশ আমলে নয়, হিন্দু রাজাদের সময়েই কি বেশি ধনী ছিল দেশ?
ঘটনাটি লাদাখের। সেখানকার জনপ্রিয় বিজেপি নেতা শেখ নাজির আহমেদের সঙ্গে সম্প্রতি এমনটাই ঘটেছে। লাদাখ বিজেপির দীর্ঘদিনের সদস্য তিনি। স্রেফ সদস্য বললে ভুল হবে, বিগত কয়েক বছর ধরে তিনিই লাদাখ বিজেপির সহ-সভাপতি। তাঁর দাবি, লাদাখে বিজেপি প্রতিষ্ঠার অন্যতম কাণ্ডারি তিনিও। লাদাখ লোকসভায় বিজেপির জেতার নেপথ্যেও তাঁর অবদান কিছু কম ছিল না। তবে সাম্প্রতিক এক ঘটনার পর দল তাঁর সেই অবদান কার্যত মনে রাখতে চাননি বলেই দাবি বিজেপি নেতার। যদিও সেই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি নাজির আহমেদের কোনও যোগ নেই। কিছুদিন আগে তাঁর ছেলে মানজুর আহমেদ ভিনধর্মের এক তরুণীকে পালিয়ে বিয়ে করেন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ওই তরুণীর সঙ্গে মুসলিম যুবকের বিয়েতে একেবারেই সায় ছিল না স্থানীয়দের। দুজনের পরিবারের তরফেও আপত্তি জানানো হয়। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। দুজনে পালিয়ে বিয়ে করেন, এবং তারপর থেকে এলাকায় একবারের জন্যও দেখা যায়নি দুজনকে।
আরও শুনুন: লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় পতাকা উত্তোলনে সাহায্য দুই নারীর, কারা তাঁরা?
এই ঘটনারই মাশুল গুনতে হল নাজির আহমেদকে। শুধুমাত্র পদ কেড়ে নেওয়া নয়, তাঁকে দল থেকেও বহিষ্কার করেছে গেরুয়া শিবির। দলের তরফে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, নাজির আহমেদের ছেলের ওই কাণ্ডের জেরে এলাকায় সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি হতে পারে। গেরুয়া শিবিরের দাবি, ভিনধর্মের ওই তরুণীকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল নাজিরকে। তবে তেমনটা তিনি করতে পারেননি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ প্রাক্তন বিজেপি নেতা। তাঁর কথায়, ছেলের এই সিদ্ধান্তে তাঁর কোনও হাত নেই। বরং তিনি ও তাঁর পরিবারের প্রথম থেকেই এই কাজে বাধা দিয়েছেন। কিছুদিন আগে অবধি তিনি ও তাঁর স্ত্রী হজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তখনই এ ঘটনা ঘটে গিয়েছে বলে দাবি নাজির আহমেদের। কিন্তু দীর্ঘদিন বিজেপিকে সমর্থন করার পর এহেন প্রতিদান পেয়ে কার্যত হতাশ তিনি। কর্মীকে গুরুত্ব না দিয়ে স্রেফ ভোটের কথা ভেবেই দল এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমনটাই মনে করছেন ওই বর্ষীয়ান নেতা।