বাড়ছে কাজের চাপ। বাড়িতে সময় দিতে পারছে না দেশের তরুণ তুর্কিরা। এমনকি নিজেদের জন্যও এতটুকু সময় নেই তাদের। অথচ শিল্পপতি নিদান দিচ্ছেন, সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। ফলত তরুণদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়ছে। সম্প্রতি ঠিক এমনটাই দাবি করেছেন এক চিকিৎসক। ঠিক কী বলেছেন তিনি আসুন শুনে নিই।
দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে আরও বেশি খাটতে হবে তরুণদের। সম্প্রতি এমনটাই দাবি করেছেন ইনফোসিস প্রধান নারায়ণ মূর্তি। তবে সেই খাটনির যে খতিয়ান তিনি দিয়েছেন তা দেখে চক্ষু চড়কগাছ প্রায় সকলেরই। শিল্পপতির দাবি, সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে ভারতীয় তরুণদের। অন্যান্য অনেকের মতোই নারায়ণ মূর্তির এই দাবিতে বেজায় চটেছেন বেঙ্গালুরুর এক চিকিৎসকও। এই ধরনের অতিরিক্ত কাজের চাপেই ভারতীয় তরুণদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়ছে বলে দাবি তাঁর।
আরও শুনুন: আমজনতাকে ঠকাচ্ছেন নেতারা! প্রতিবাদে গাধার পিঠে চেপেই মনোনয়ন জমা দিলেন মধ্যপ্রদেশের প্রার্থী
খাতায় কলমে সময়ের হিসাব যাই থাকুক, বেসরকারি সংস্থায় অতিরিক্ত কাজ করা কোনও নতুন ব্যাপার নয়। কখনও ছুটির দিনেও ছুটতে হয় অফিস। বিশেষত দেশের আইটি ফার্ম গুলোতে এই প্রবণতা ভালোমতোই চোখে পড়ে। তবে সরাসরি এই নিয়ে বিশেষ মন্তব্য করতে শোনা যায়নি কোনও শিল্পপতি বা আইটি সংস্থার প্রধানকে। তবে কিছুদিন আগে এই নিয়ে খোলাখুলি মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন ইনফোসিস প্রধান নারায়ণ মূর্তি। দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করার দাবি তুলেছেন তিনি। যার সহজ মানে করলে দাঁড়ায় সপ্তাহে ৬দিন অন্তত ১২ ঘণ্টা ধরে করতে হবে কাজ। স্বাভাবিক ভাবেই, এই দাবি সামনে আসতে বেজায় ক্ষুব্ধ নেটিজেনরা। সেখানে নারায়ণ মূর্তিকে রীতিমতো কটাক্ষও শানিয়েছেন অনেকেই, তবে সেই তালিকায় রয়েছেন চিকিৎসক দীপক কৃষ্ণমূর্তি। ভারতীয় তরুণদের হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়ার কারণ হিসেবে এই ধরনের ব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন তিনি। একেবারে হিসাব করে তিনি দেখিয়েছেন এই নিয়ম চালু হলে ঠিক কী অবস্থা হবে ভারতীয় তরুণদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় দীপক লিখেছেন, ২৪ ঘন্টায় একদিন। শিল্পপতির প্রস্তাবিত নিয়ম মেনে সপ্তাহে ৭০ ঘন্টার কাজের জন্য, ৬ দিন অন্তত ১২ ঘণ্টা করে কাজ করতে হবে। তাহলে হাতে রইল বাকি ১২ ঘণ্টা। এর মধ্যে ৮ ঘন্টার ঘুম বাদ দিলে হাতে থাকে মাত্র ৪ ঘণ্টা। যার মধ্যে ২ ঘণ্টা যাবে খাওয়া দাওয়া সহ রোজকার কাজকর্ম করতেই কেটে যাবে ২ ঘণ্টা। রই বাকি ২, যা সহজেই খরচ হয়ে যাবে ট্রাফিক জ্যামের কল্যাণে। সুতরাং, দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করলে, না থাকবে কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ, না থাকবে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ। এমনকি সারাদিনে অন্তত কিছুক্ষণ ব্যায়াম করারও সুযোগ থাকবে না। এদিকে চিকিৎসকরা বার বার দাবি করেন, নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস না থাকলে হৃদরোগের সম্ভাবনা প্রবল। অথচ কাজের চাপে তেমনটাই হচ্ছে বেশিরভাগের জীবনে। তাই হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতাও এত বাড়ছে ভারতীয় তরুণদের। কটাক্ষের সুরে এমনটাই দাবি করেছেন দীপক।
আরও শুনুন: ঘুম থেকে দেরিতে ওঠার শাস্তি, ১২ জন পড়ুয়াকে গরম চামচের ছ্যাঁকা দিল স্কুল
বলা বাহুল্য দীপকের এই পোস্টও কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই এই দাবি তীব্র সমর্থন জানিয়েছেন। কেউ কেউ ব্যঙ্গ করে বলেছেন, নিজের পরিবারের কথা ভুলে গিয়ে কাজ করে যান সারাদিন, আর শিল্পপতিদের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স আরও উপচে পড়ুক। সবমিলিয়ে নেটদুনিয়া রীতিমতো উত্তাল নারায়ণ মূর্তির এই দাবি ঘিরে। শিল্পমহলের কেউ কেউ তাঁকে সমর্থন জানালেও, তরুণরা একেবারেই ভালোভাবে নেয়নি এই প্রস্থাব।