হিজাব বিতর্ক নিয়ে যখন এ দেশ উত্তাল, সেই সময়েই আসরে নেমেছিল আল কায়দা প্রধান আয়মান আল-জওয়াহিরি। হিজাবের সমর্থনে আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন যে ছাত্রীটি, ভিডিও প্রকাশ করে তাঁকে সমর্থন দিয়েছিল এই জঙ্গিনেতা। সেই ভিডিওটির দরুন নাকচ হয়ে গিয়েছিল তার মৃত্যু নিয়ে ছড়ানো গুজবও। তবে এবার আর জল্পনা নয়, সত্যি হল তার মৃত্যুর খবর। আমেরিকার এয়ার স্ট্রাইকে নিহত আল-জওয়াহিরির মৃত্যুকে, সুবিচার হিসেবেই দেখছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
দু-দশক আগের কথা। অতর্কিতে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে বিমান হামলা চালিয়েছিল আল কায়েদা। অসংখ্য সাধারণ মানুষের মৃত্যু তো হয়েইছিল পাশাপাশি মাথাচাড়া দিয়েছিল আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস। গোটা পৃথিবীকে প্রায় নাড়িয়ে দিয়েছিল ওই জঙ্গি-হামলা। সন্ত্রাসবাদের কালো ছায়ায় রাতারাতি বদলে গিয়েছিল আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ। তারপর বহু জল গড়িয়ে গিয়েছে পৃথবীর মহাসাগরগুলি দিয়ে। এতদিনে আমেরিকার এয়ার স্ট্রাইকে খতম আল কায়দা প্রধান আয়মান আল-জওয়াহিরি। গণমাধ্যমে এই ঘোষণা করে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানালেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত হল।’’ একই মর্মে টুইট করলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। লাদেনের পরবর্তী নেতৃত্বকে নিকেশে সুবিচার মিলল বলেই মত তাঁরও।
আরও শুনুন: মণিপুরী কন্যার পদকজয়ে উচ্ছ্বাস, তবু তাঁদের প্রতি মনোভাব কি বদলাবে?
২০১১ সালের ২ মে, পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদের লুকোনো ঘাঁটিতে হানা দিয়েছিল মার্কিন বাহিনী। টুইন টাওয়ার কাণ্ডের ১০ বছর পরে নিকেশ করা গিয়েছিল হামলার মাস্টারমাইন্ড তথা ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়দার প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে। আরও ১০ বছর পেরিয়ে যেন সম্পূর্ণ হল সেই বৃত্তটি, যখন কাবুলে আমেরিকার ড্রোন হানায় নিহত হল ৯/১১ হামলার অন্যতম চক্রী আয়মান আল-জওয়াহিরি। ওসামা বিন লাদেনের অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিল পেশায় শল্য চিকিৎসক এই ব্যক্তি। লাদেনের মৃত্যুর পরে তাই দলের দায়িত্ব উঠেছিল তারই হাতে। বিশ্বজুড়ে ইসলামি সন্ত্রাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছিল জওয়াহিরি। সম্প্রতি হিজাব বিতর্ক নিয়ে যখন উত্তাল হয়ে উঠেছিল ভারত, তখন সুযোগ বুঝে বিচ্ছিন্নতাবাদকে উসকে দিতে চেয়েছিল এই জঙ্গি নেতা। আর সেই মতলবেই হিজাব পক্ষকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে প্রকাশ করেছিল ভিডিওবার্তা। হিজাব ইস্যুতে কর্ণাটকে প্রতিবাদের মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছিল মুসকান খান নামে হিজাব-পরিহিতা এক ছাত্রী। তাঁকে ‘বোন’ বলে সম্বোধন করে, তাঁর উদ্দেশে কবিতা লিখেছে বলেও জানিয়েছিল জওয়াহিরি।
আরও শুনুন: বন্দিদের যৌনদাসী হিসেবে ধর্ষিতা হয়েছেন বারবার, বিস্ফোরক অভিযোগ জেলের মহিলা রক্ষীর
ওসামা বিন লাদেনের পর এবার জওয়াহিরিকে নিকেশ করে জঙ্গি সংগঠনটিকে বড়সড় ধাক্কা দেওয়া গেল বলেই মনে করছে আমেরিকা। টুইট বার্তায় বাইডেন সাফ জানিয়েছেন, ‘যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায়, তাদের থেকে আমেরিকার মানুষকে রক্ষা করার সংকল্প জারি রেখেছে আমেরিকা।’ একইভাবে ওবামাও টুইটে লিখেছেন, ৯/১১ হামলার কুড়ি বছরেরও বেশি সময় পরে সুবিচার পেল হামলার অন্যতম চক্রী আয়মান আল-জওয়াহিরি। সন্ত্রাসকে যেভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সেদিন, যে অন্যায় হয়েছিল, এতদিনে যেন তার প্রকৃত বিচার হল- এমনটাই মনে করছেন নোবেলজয়ী বারাক ওবামা।