অটোচালক থেকে মেয়র। প্রায় স্বপ্নের উড়ানই বলা যায়। তাই-ই বাস্তব হতে চলেছে তামিলনাড়ুর এক ব্যক্তির জীবনে। না, রাতারাতি আসা সাফল্য অবশ্য নয়। দীর্ঘদিন পার্টির একনিষ্ঠ কর্মী হওয়ার সুবাদেই এই বিরল সম্মান পেতে চলেছেন তিনি। আসুন, শুনে নিই তাঁর কথা।
অটোচালক তিনি। দিনে আয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। গত কুড়ি বছর ধরে নিজের কাজটাই মন দিয়ে করে চলেছেন তামিলনাড়ুর কে সর্বানন। পড়াশোনা দশম শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলাতেই মা-বাবাকে হারিয়েছেন। বড় হয়ে ওঠা দাদুর কাছে। সেই দাদুর থেকেই চিনেছিলেন কংগ্রেস দলের ‘হাত’ প্রতীকটিকে। দাদুর আদর্শ সঞ্চারিত হয়েছিল তাঁর মধ্যেও। অল্পবয়সে যেমন স্টিয়ারিং-এ হাত রেখেছিলেন, তেমন হাত রেখেছিলেন কংগ্রেসের ওই ‘হাত’ প্রতীকেও। তারপর থেকে দীর্ঘদিন কংগ্রেসের একনিষ্ঠ সমর্থক-কর্মী তিনি। আর সেই আনুগত্যেরই পুরস্কার পেলেন সর্বানন। এবার তিনি হতে চলেছেন থাঞ্জাভুর জেলার কুম্বকোনাম কর্পোরেশনের মেয়র।
আরও শুনুন – পাত্রীর গায়ের রং উল্লেখ থাকলে প্রকাশিত হবে না বিয়ের বিজ্ঞাপন, নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত সংবাদমাধ্যমের
একজন নিষ্ঠাবান পার্টিকর্মীকে যে সম্মান দেওয়া উচিত, তাই-ই দিয়েছে কংগ্রেস দল। ডিএমকের হাতেই সিংহভাগ কর্পোরেশন, একটি আসনের ক্ষেত্রেই মেয়র হতে পারতেন কংগ্রেসের কেউ। প্রত্যাশিত ভাবেই এই পদটি যাওয়ার কথা দলের তাবড় কোনও নেতার কাছে। সর্বানন ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি যে, তাঁকে এই পদের জন্য বেছে নেওয়া হবে। একদিন জেলা অফিস থেকে এক বরিষ্ঠ নেতা তাঁকে ডেকে পাঠান। সেইসঙ্গে জানান, তাঁর জন্য একটি সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। যখন তিনি অফিসে ঢুকছেন, তখন সেই নেতা উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, কুম্বকোনামের প্রথম মেয়রকে স্বাগত জানাচ্ছি। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান সর্বানন। তিনি ভাবতেও পারেননি যে, সিনিয়র নেতাদের না বেছে তাঁকে মেয়র হিসাবে নির্বাচিত করা হবে। প্রাথমিক বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে তিনি বলেন, তিনি সাধারণ একজন অটোচালক মাত্র! অর্থা মেয়র হওয়া নিয়ে তাঁর দ্বিধা তিনি প্রকাশ করেন। বরিষ্ঠ নেতা তখন তাঁকে বলেন, তাতে কী! একজন মেয়র হওয়ার সব গুণ তাঁর মধ্যে আছে। তাই দল তাঁকেই মেয়র হিসাবে মনোনীত করছে। এরপর সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর থেকেও ফোন পান তিনি। সত্যিই তিনি অটো চালাতেন কিনা, এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী, এবং তাঁকে অভিনন্দন জানান। সর্বানন বলছেন, স্বয়ং রাহুল গান্ধীও তাঁর মনোনয়নে খুশি।
আরও শুনুন – অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক মাছ! আশ্চর্য মমি দেখে চক্ষু চড়কগাছ বিজ্ঞানীদের
এই দলের হয়েই আজীবন কাজ করেছেন সর্বানন। বিভিন্ন নির্বাচনের সময় জানপ্রাণ লাগিয়েছেন। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শামিল হয়ে বারকয়েক গ্রেপ্তারও হয়েছেন। দলের জন্য তিনি যেমন ঘাম ঝরিয়েছেন, দলও তাঁকে প্রাপ্য সম্মান-মর্যাদা দিয়েছে। গণতন্ত্র হল সেই ব্যবস্থা যার মূলমন্ত্র হল- বাই দ্য পিপল, অফ দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল। সর্বাননের এই সর্বোচ্চ পদে আসীন হওয়া যেন গণতন্ত্রের সেই আদর্শকেই আর-একটু উজ্জ্বল করল।