১১ বছর ধরে বাইরের আলো দেখার অধিকার মেলেনি তাঁর। কেন-না বাড়ির মধ্যেই তাঁকে বন্ধ করে রেখেছিলেন তাঁর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পেশায় আইনজীবী ওই ব্যক্তির এহেন আচরণের ঘটনা শুনে শিউরে উঠেছেন সকলেই। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিয়ে মানেই একরাশ আশা আর নতুন স্বপ্ন। তেমনই সুন্দর এক জীবনের স্বপ্ন নিয়েই নতুন জীবনে প্রবেশ করেছিলেন এই তরুণী। শিক্ষিত, সফল, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরিও করতেন এই তরুণী। কিন্তু বিয়ের পর তাঁর সেই স্বাভাবিক জীবনটা যে আক্ষরিক অর্থেই স্রেফ চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি হয়ে যাবে, এমনটা কল্পনাও করতে পারেননি তিনি কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ। ‘রুম’ নামের একটি বিখ্যাত সিনেমায় দেখা গিয়েছিল, সাত বছর ধরে এক যুবতিকে একটি ছোট্ট ঘরে বন্দি করে রেখেছিল এক ব্যক্তি। সেই অন্ধকূপেই জন্ম নিয়েছে তার সন্তান, দিনে দিনে যার বয়স গড়িয়েছে পাঁচ বছরে। অথচ তখনও পর্যন্ত কোনও দিন মুক্ত আকাশ দেখার সুযোগই মেলেনি সেই বাচ্চাটির। কিন্তু কল্পনায় বানিয়ে তোলা গল্প নয়, বাস্তবেও যে এমন ঘটনা ঘটতে পারে, তা বোধহয় কল্পনাও করা যায় না। অথচ তেমনটাই ঘটেছে এই তরুণীর সঙ্গে। একটি বাড়ির মধ্যে বন্ধ থেকেই জীবনের এক দশকেরও বেশি সময় কাটিয়ে ফেলতে হয়েছে তাঁকে। আর এই অমানুষিক নির্যাতন তাঁদের উপহার দিয়েছেন যিনি, তিনি কোনও অজ্ঞাত আততায়ী নন। সম্পর্কে তিনি ওই তরুণীর স্বামী। অবশ্য তাঁর সঙ্গে এই অত্যাচারে শামিল হয়েছিলেন ওই ব্যক্তির আত্মীয়রাও, অর্থাৎ তরুণীর শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
আরও শুনুন: নারীদের গৃহশ্রমের হিসেব ধরলে বাড়ত দেশের জিডিপি, দাবি করল এসবিআই
জানা গিয়েছে, সাই সুপ্রিয়া নামের ওই তরুণী অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলার বাসিন্দা। ২০০৮ সালে তাঁর বিয়ে হয়েছিল ভিজিয়ানগরমের গোদাবরী মধুসূদনের সঙ্গে। ওই ব্যক্তি পেশায় আইনজীবী। বেঙ্গালুরুর তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করতেন ওই দম্পতি। আর সেখানেই তাঁদের প্রথম সন্তানের জন্ম। বছর তিনেক পর ভিজিয়ানগরমে ফিরে এসে সংসার পাতেন ওই দম্পতি। ওই ব্যক্তি সেখানেই প্র্যাকটিস শুরু করেন। এমনকি আরও দুই সন্তানও হয় তাঁদের। কিন্তু সমাজের তথাকথিত উচ্চশ্রেণির এই পরিবারের অন্দরমহলের ছবিটা ছিল একেবারেই উলটো। বাড়ি থেকে বেরনোরই অনুমতি ছিল না বাড়ির বউটির। এমনকি তাঁর বাপের বাড়ির কোনও লোকজনও তরুণী বা তার সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারতেন না। যদিও অশান্তির ভয়ে দীর্ঘদিন চুপ করেই থেকেছেন তাঁরা। তবে সম্প্রতি মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়েও তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি তরুণীর পরিবারের লোকজন। আর তারপরেই তাঁদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। সটান পুলিশের দ্বারস্থ হন তাঁরা। যদিও পুলিশকেও প্রথমে বাড়িতে ঢুকতে দিতে চাননি তরুণীর স্বামী। সার্চ ওয়ারেন্ট দাবি করেন তিনি। শেষমেশ আদালতের সহায়তায় ওই তরুণীকে উদ্ধার করেছেন তাঁর বাড়ির লোকজন। জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে তরুণীর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধেও। এতদিন ঘরবন্দি থাকার ফলে রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তরুণী। তা সত্ত্বেও মেয়েকে ফিরে পেয়েই আনন্দে আত্মহারা তাঁর পরিবার।