অস্কারমঞ্চে নজিরবিহীন ঘটনা। মঞ্চে উঠে সঞ্চালকের গালে সপাটে চড় কষিয়ে দিয়েছেন অস্কারজয়ী অভিনেতা উইলস্মিথ। বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের বিরাম নেই। অস্কারের মঞ্চে এমন ঘটনা দেখে চোখ কপালে তুলেছেন অনেকেই। তবে এ-ই প্রথম নয়। এর আগেও এমন অসংখ্য বিতর্কিত ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ওই মঞ্চ। তেমনই কিছু অদ্ভুত ঘটনার কথা বলব আজ। শুনে নিন।
গত কয়েক দিন ধরে সমস্ত আলোচনা, বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে একটি নাম। তিনি অস্কারজয়ী অভিনেতা উইলস্মিথ। অস্কারের মঞ্চে সঞ্চালক-কমেডিয়ান ক্রিস রকের গালে তিনি বসিয়ে দিয়েছেন একটি বিরাশি সিক্কার চড়। আর সেই ঘটনা নিয়েই সরগরম গোটা দুনিয়া। কারণখানাও জোরদার। বহুদিন ধরেই অ্যালোপেশিয়া রোগের শিকার স্মিথের স্ত্রী জাডা পিঙ্কেট। তাঁর সেই চুল নিয়েই কিনা ঠাট্টা করে বসলেন ক্রিস। তা-ও আবার এক মঞ্চ লোকের সামনে। পরে অবশ্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন দুজনেই। তবে সেদিন এক আশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী থেকেছে অস্কারের মঞ্চ।
তা অস্কার মঞ্চে এমন বিতর্কিত ঘটনা বোধহয় এই প্রথম নয়। এর আগেই এমন নানা অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী থেকেছে এই মঞ্চ। তেমনই কিছু বিতর্কিত ঘটনার গল্প আজ আপনাদের শোনাব। যা ঘটেছে এই অস্কার মঞ্চেই।
আরও শুনুন: অন্যের টাক মাথা নিয়ে করেছিলেন ঠাট্টা, চড় কাণ্ডের পর কাঠগড়ায় খোদ উইল স্মিথ
সেটা ২০১২ সালের ঘটনা। রেড কার্পেড ধরে অস্কারের মূল অনুষ্ঠানে আসেন হলিউডের কৌতূকাভিনেতা সাচা ব্যারন। পরনে ডিক্টেটরের সাদা পোশাক। তাঁর হাতে ছিল উত্তর কোরিয়ায় প্রাক্তন শাসক কিম জং ইলের চিতাভস্মের পাত্র। যেখানে কিমের ছবিও সাঁটা ছিল। অস্থিভস্ম নিয়ে অস্কারের মঞ্চে কেন, এসব ভাবতে ভাবতেই ঘটে গেল ঘটনাটা। পাত্র থেকে ওই অস্থিভস্ম ব্যারন ছড়িয়ে দিলেন অস্কারমঞ্চের সঞ্চালক ব়্যান সিক্রেস্টের গায়ে। হতবাক দর্শক। পরে জানা যায় ‘দ্য ডিক্টেটর’ ছবির প্রচারের জন্যেই এমন আজগুবি কাণ্ড করেছিলেন সাচা।
এই অস্কারমঞ্চেই নিজের ভাইকে জড়িয়ে আশ্লেষে চুমু খেয়ে বসেছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। সেটা নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। সেবার সেরা সহ-অভিনেত্রীর সম্মান পেয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা।
আরও একটা ঘটনার কথা শুনুন। সেটা ২০১৩ সালের ঘটনা। সেবার সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অস্কার জিতেছিলেন মার্কিন অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্স। পুরস্কার নিতে মঞ্চে ওঠার সময় পোশাকে পা জড়িয়ে পড়তে পড়তে কোনওক্রমে বেঁচে যান জেনিফার। খুব কষ্ট করেই সেদিন হাসি চেপেছিলেন দর্শকেরা।
এর পরের ঘটনাটি আরও ভয়ঙ্কর। সেটা ১৯৭৪ সালের অস্কার অনুষ্ঠান। মঞ্চে বক্তৃতা রাখছেন ডেভিড নিভেন। এমন সময় সকলকে চমকে দিয়ে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় মঞ্চের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে দৌড়ে যেতে দেখা গেল মার্কিন ফটোগ্রাফার রবার্ট অপেলকে। প্রাথমিক ভাবে চমকে গেলেও পরে হাসি চেপে রাখতে পারেননি নিভেন।
আরও শুনুন: শুধু আমির নন, অভিনয় ছেড়ে দিতে ছেয়েছিলেন শাহরুখও, কেন জানেন?
ভুলভ্রান্তিরও কম প্রমাণ নেই অস্কারমঞ্চে। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। ২০১৭ সালে সেরা ছবির পুরস্কার পায় ‘মুনলাইট’ নামে একটি ছবি। তবে তার বদলে ‘লা লা ল্যান্ড’ ছবিটির নাম ঘোষণা করে ফেলেছিলেন সঞ্চালকদ্বয়। ততক্ষণে উল্লাসে ফেটে পড়েছেন ‘লা লা ল্যান্ড’ ছবির কলাকুশলীরা। মঞ্চে পুরস্কার নিতে উঠেও আসেন তাঁরা। সে সময় সঞ্চালকদের মনে পড়ে ভুল নাম ঘোষণা হয়েছে। পরক্ষণেই ভুল শুধরে সেরা ঘোষণা করা হয় ‘মুনলাইট’-কে। খাম বদলে যাওয়াতেই নাকি এমন দুর্ঘটনা। সে সময় ‘লা লা ল্যান্ড’ ছবির কলাকুশলীদের মুখটা ভাবুন একবার।
২০১৩ সালে সেরা পরিচালক বিভাগে এমন একজনকে অস্কার দেওয়া হয়েছিল, তিনি ছিলেন শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত। যদিও পুরষ্কার নিতে সেদিন মঞ্চে আসেননি ওই পরিচালক, তবু ব্যাপারটি নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি।
সব মিলিয়ে সব সময়ই এমন ঘটনাবহুল থেকেছে অস্কারের এই মঞ্চ। বিতর্ক তার পিছু ছাড়েনি কখনওই। অস্কারের মঞ্চ যে তার চরিত্র বদলায়নি, তা ফের এবছর প্রমাণ করে দিলেন উইলস্মিথ।