কামাল মৌলা মসজিদ। ইসলাম ধর্মের মানুষেরা সেখানে উপাসনা করে আসছেন বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু সেখান থেকেই এবার উদ্ধার করা হল ৩৯টি দেবমূর্তি। যা নিয়েই ঘনাল বিতর্ক।
শাসক বদলেছে, বদলেছে শাসকের ধর্মও। আর সেইসঙ্গেই বদলে বদলে গিয়েছে কোনও কোনও ধর্মীয় স্থানও। এক ধর্মের উপরে পরত চড়েছে আরেক ধর্মের, এক ধর্মের উপাসনাস্থলেই হয়তো বা গড়ে উঠেছে অন্য ধর্মের উপাসনাস্থল। আর তাই নিয়েই বিতর্কের ঝড় ওঠে মাঝে মাঝে। সম্প্রতি ঘটল তেমনই এক ঘটনা। মধ্যপ্রদেশের এক মসজিদ থেকে হদিশ মিলল ৩৯টি দেবমূর্তির। সবগুলিই কমবেশি ভগ্ন। মূর্তিগুলির মধ্যে রয়েছে গণেশ, সরস্বতী, কৃষ্ণ, মহাদেব, হনুমান, মহিষাসুরমর্দিনী ইত্যাদি। তার সঙ্গেই ১৭১০টি আরও নানারকমের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে, যার সবই হিন্দু ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত। মসজিদে সমীক্ষা চালিয়ে এইসব ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া।
আরও শুনুন:
বিচারপতিকে ‘ভগবান’ মনে করলেই সর্বনাশ! হুঁশিয়ারি খোদ প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের
সাম্প্রতিক কালে অনেকসময়ই দাবি উঠেছে, একাধিক মুসলিম ধর্মস্থান আদিতে হিন্দু মন্দির ছিল। কখনও বাবরি তো কখনও জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে বিতর্ক, কখনও আবার তাজমহল আদতে তেজোমহালয়া কি না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। মুসলিমদের এ দেশে আসা এবং শাসক হয়ে বসা, আর সেই সূত্রে বিভিন্ন স্থান অধিগ্রহণ করা নিয়ে বারে বারে সুর চড়িয়েছেন হিন্দুত্ববাদীরা। একাধিক মসজিদে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোরও দাবি করেছেন তাঁরা। হিন্দুত্ববাদীদের বক্তব্য, সমীক্ষা করলেই প্রমাণ মিলবে যে, কোনও মন্দির ধংস করেই সেখানে মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছিল মুসলিম আমলে। মধ্যপ্রদেশের ভোপালের এই কামাল মৌলা মসজিদ নিয়েও উঠেছিল তেমনই দাবি। জানা গিয়েছে, ওই মসজিদটি ১১ শতকের পুরোনো। স্থানীয় মুসলিমরা তাকে কামাল মৌলার মসজিদ বলেই জানেন। এদিকে তাকে দেবী সরস্বতীর মন্দির তথা ভোজশালা বলেও দাবি করে থাকেন হিন্দুদের একাংশ। তার জেরেই এখানে ৯৮ দিনের এএসআই সমীক্ষার নির্দেশ দেয় আদালত। আর সেই সমীক্ষাতেই মিলল দেবদেবীর মূর্তি ও ধ্বংসাবশেষ। যদিও মূর্তিগুলি এখানে কীভাবে এল, তার নেপথ্যে কোনও অশান্তির ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান মসজিদ পক্ষ।
এর আগে ২০০৩ সালে পুরাতত্ত্ব বিভাগই গাইডলাইন বেঁধে দিয়েছিল যে, এখানে প্রতি মঙ্গলবার হিন্দুরা এবং প্রতি শুক্রবার মুসলিমরা পুজোআচ্চা বা উপাসনা করতে পারবেন। এই পরিস্থিতিকে সমন্বয়ের এক উদাহরণ হিসেবেও দেখা যেতে পারত হয়তো। তবে এবার মূর্তি উদ্ধারের পর নতুন করে উসকে উঠল মন্দির মসজিদ দু’পক্ষের বিতর্কই।