য়াকফ বিলের প্রতিবাদে কালো ব্যান্ড পরে নমাজ পাঠ। এতেও ‘অপরাধ’ খুঁজছে প্রশাসন। যোগীরাজ্যে নোটিশ জারি হল ৩০০ প্রতিবাদীর বিরুদ্ধে। তাহলে কি শান্তিপূর্ণ পথে প্রতিবাদের অধিকারও হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ? প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কালো ব্যান্ড পরে প্রতিবাদ। একেবারেই প্রতীকী। নতুন কিছুও নয় অবশ্য। খেলার মাঠ থেকে সিনেমা হল, বিশ্বজুড়েই এমন প্রতিবাদ দেখা যায়। কারও কোনও ক্ষতি না করে, নীরবে নিজের মত জানিয়ে দেওয়া। অথচ এই প্রতিবাদের ধরণ নিয়েও বেজায় আপত্তি উঠছে যোগীরাজ্যে।
ঠিক কী হয়েছে?
সম্প্রতি সংসদে পাশ হয়েছে ওয়াকফ সংশোধনী বিল। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে তা এখন আইন। কিন্তু বিতর্ক এখনও কাটেনি। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছে মামলা। অভিযোগ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে এই আইনে। পালটা সুপ্রিম দরবারে ক্যাভিয়েট দাখিল করেছে কেন্দ্র। বলা হয়েছে, কেন্দ্র সরকারের মতামত না শুনে যেন কোনও রায় না দেয় শীর্ষ আদালত। একইসঙ্গে ওয়াকফ প্রসঙ্গে নতুন এক বিতর্ক সামনে এসেছে। ওয়াকফের সম্পর্ক এর থাকলেও বিষয়টা নিতান্তই নাগরিক অধিকার নিয়ে। স্পষ্ট করে বললে, প্রতিবাদের অধিকার নিয়ে।
ভারতীয় সংবিধান বাক স্বাধীনতার কথা বলে। সংবিধান অনুযায়ী এদেশে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানোর অধিকারও রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এই অধিকারকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ঘটনা যোগীরাজ্যের। ওয়াকফ সংশোধনী নিয়ে সারা দেশজুড়ে যে বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ চলছে, উত্তরপ্রদেশও তার অংশ। তবে সেখানকার প্রশাসন প্রতিবাদ দমনে বেশ সচেতন। এমনিতে কোনও প্রতিবাদ মিছিলে যদি অশান্তির আবহ তৈরি হয়, তাহলে তা এনিয়ন্ত্রণ করতেই হয়, তবে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ নিয়েও যোগীরাজ্যের প্রশাসনের বেশ সমস্যা। মুজফ্ফরনগরের ঘটনার কথাই ধরা যাক। ইদের সময় সেখানকার কিছু মুসলিম ব্যক্তি হাতে কালো ব্যান্ড পরে মসজিদ গিয়েছিলেন। নমাজ পরে তাঁরা ফিরেও আসেন। কোনও অশান্তি বা অশান্তির আবহ তৈরি হয়নি। অথচ দিনকয়েক আগে তাঁদের বাড়িতে নোটিশ এসেছে। সেখানে প্রশাসনের তরফে তাঁদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। মোটা টাকার বন্ড জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সবটাই ওই ‘কালো ব্যান্ড’ পরার অপরাধে। এক-দুজন নয়, এমন নোটিশ পেয়েছেন প্রায় ৩০০ জন। এঁদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন, যারা এলাকায় বেশ পরিচিত। কেউ ওষুধ বিক্রি করেন, কেউ বা অন্য কাজ। কেউই অন্তত সমাজবিরোধী নন। অথচ, প্রশাসন এঁদের এই তকমা দিচ্ছে। পুলিশের তরফে দাবি করা হচ্ছে, এঁরা নাকি অশান্তি ছড়াতে পারেন। কালো ব্যান্ড পরে মসজিদে যাওয়া আসলে সমাজে ভুল বার্তা ছড়ানোর প্রয়াস মাত্র। সুতরাং এঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতেই হত। প্রশাসনের দাবি এখানেই শেষ নয়, বলা হচ্ছে এর আগে এনআরসি, সিএএ আইনের বিরুদ্ধে একইভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এঁদের কেউ কেউ। সুতরাং এঁদের সতর্ক করা প্রশাসনের একান্ত কর্তব্য। এমনটাই মনে করেছেন সেখানকার প্রশাসনিক কর্তারা। যে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তাতে সই রয়েছে খোদ ম্যাজিস্ট্রেটের। স্পষ্ট বলা হয়েছে, নোটিশ যিনি পাচ্ছেন তাঁকে মোটা টাকার বন্ড জমা দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে, আগামীতে কোনও অশান্তির কারণ তিনি হবেন না।
আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, নীরব প্রতিবাদেও কেন এমন আচরণ? কালো ব্যান্ড পরে প্রতীকী প্রতিবাদ তো নতুন কিছু নয়। গোটা বিশ্ব যে প্রতিবাদ দেখে অভ্যস্ত, তাতেও সমস্যা হচ্ছে যোগীরাজ্যের প্রশাসনের। এমন নয় যে ওয়াকফের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্রেফ যোগীরাজ্যেই হচ্ছে। গোটা দেশের এর আঁচ পড়েছে। মিছিল, অবরোধ সবই হচ্ছে। কোথাও কোথাও তা মাত্রা ছাড়ালে, নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। এর আগেও সিএএ, এনআরসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, কিংবা কৃষক আন্দলনের মতো ঘটনার সাক্ষী থেকেছে গোটা দেশ। সেইসব প্রতিবাদ নিয়েও বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। কিন্তু একেবারেই নীরব অহিংস প্রতিবাদ নিয়ে আপত্তির ঘটনা খুব একটা হয়নি। তাই ওয়াকিহবাল মহল মনে করছে, যোগীরাজ্যের প্রশাসন এই আচরণের মাধ্যমে অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিল। যা গণতন্ত্রে কতটা কাম্য, সে প্রশ্নও উঠতেই পারে।