একদিকে রেল, অন্যদিকে সড়ক। নজিরবিহীন দুর্ঘটনা চারিদিকে। এই দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে অতিষ্ঠ জনতা।
সংবাদপত্রের হেডলাইনে বারবার একই বিষয়। দুশ্চিন্তা ঘুম কেড়েছে রাজ্য তথা দেশের বাসিন্দাদের। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একটি সমীক্ষার হিসেব বলছে, বিগত দশ বছরে দেশে পথ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ তিন হাজারের বেশি নাগরিক। আর আরও হাড় হিম করা বিষয় কী জানেন? এই সংখ্যা কিন্তু চণ্ডীগড় এবং ভুবনেশ্বরের জনসংখ্যার প্রায় সমান। ২০০৪ থেকে ২০১৪-র মধ্যে মৃতের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ১২ লাখ এক হাজার। কিন্তু তারপর সে সংখ্যা বেড়ে হয়েছে আরও তিন লাখ।
করমণ্ডলের দুর্ঘটনার কথা এখনও আমাদের মনে টাটকা। তারই মাঝে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা। একের পর এক রেল দুর্ঘটনা মোদি জমানায় রেলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিগত দশ বছরে রেল সুরক্ষায় একাধিক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে মোদি সরকার। ‘মিশন জিরো অ্যাক্সিডেন্ট’ চালু হওয়ার পরে ২০১৯ সালে রেল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা শূন্যে পৌঁছায়, এমনটাও জানা গিয়েছিল। কিন্তু দুর্ঘটনা একেবারে থামেনি। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, রেল দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪-২০২৩ পর্যন্ত মোদি জমানায় দুর্ঘটনা হয়েছে ৬৩৮টি।
তবে এ তো গেল রেল দুর্ঘটনার কথা। কিন্তু শুধুই কি রেল? আজ্ঞে না। রেল দুর্ঘটনার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা। প্রশাসনিক তরফ থেকে বলা হয়েছে নানাভাবে চেষ্টা করেও পথ দুর্ঘটনায় কোনোমতেই টানা যাচ্ছে না রাশ। যদিও বিগত দশ বছর ধরেই এই দেশে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ জাতীয় প্রচার চালানো হচ্ছে সমস্ত রাজ্য, এমনকী কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতেও। তারপরেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা যাচ্ছে যে, ভারতে প্রতি ১০ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে আড়াইশো জনের পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ যায়। অথচ এই একই সংখ্যা পশ্চিমের দেশগুলিতে নজরে পড়ার মতো কম। জানলে অবাক হতে হয়, অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি ১০ হাজার কিলোমিটারে ১১জন, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনে যথাক্রমে ৫৭ ও ১১৯জন। তাহলেই ভাবুন। প্রাণ হাতে করে আর কাঁহাতক?
আরও শুনুন: রেল দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পেতে অপেক্ষা করতে হবে ২২৭ বছর! কিন্তু কেন?
আচ্ছা, ভেবে দেখেছেন কি? প্রশাসনিক উদাসীনতা ছাড়াও আরও কী কী কারণ থাকতে পারে এর পিছনে? সম্প্রতি নীতিন গডকড়ির সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক দ্বারা প্রকাশিত তথ্য বলছে গত দশ বছর আগে রেজিস্টার্ড গাড়ির সংখ্যা ছিল ১৫ কোটি। আর এখন? এখন তা বেড়ে একলাফে হয়েছে ২৪ কোটি। শুধু যে গাড়ি বেড়েছে তো নয়। গাড়ির পাশাপাশি লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে রাস্তাও। গত দশ বছর আগে দেশে রাস্তার পরিধি ছিল আটচল্লিশ লক্ষ কিলোমিটার। ২০১৯-এ তা বাড়তে বাড়তে হয়েছিল তেষট্টি লক্ষ কিলোমিটার। সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের তরফ থেকে রাস্তা নিয়ে সর্বশেষ পরিসংখ্যান এখনও আসেনি। তবে তাঁরা এটুকু জানিয়েছেন যে রাস্তা বাড়িয়ে আরও দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এখন স্থগিত। এ কথা অনস্বীকার্য যে, পথ দুর্ঘটনার নেপথ্যে প্রশাসনিক গাফিলতি যেমন রয়েছে, তেমনই জনগণের দায়ও একেবারে এড়িয়ে যাওয়ার জো নেই। একদিকেগাড়ির সংখ্যা যেভাবে বেড়ে চলেছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সড়কের উন্নয়ন হয়নি; অন্যদিকে জনসচেতনতামূলক নানান প্রচার করলেও কিছুতেই রোখা যাচ্ছে না বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভ্যাস। তাই ঠিক কোন উপায়ে মিলবে সুরক্ষা, সেই প্রশ্নে কপালে ভাঁজ সাধারণ নাগরিকের।