তিরুপতির লাড্ডু প্রসাদে গরুর চর্বি। চন্দ্রবাবু নাইডুর অভিযোগ মান্যতা দেয় টেস্ট রিপোর্ট। যদিও মন্দিরের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। ভক্তরাও যে এই অভিযোগ খুব একটা আমল দিচ্ছেন না তা স্পষ্ট হল বিগত কয়েকদিনের লাড্ডু বিক্রির হিসাবে। জানা গিয়েছে, ৪ দিনে প্রায় ১৪ লক্ষ লাড্ডু বিক্রি হয়েছে তিরুপতি মন্দিরে। কিন্তু বছরের হিসাবে অঙ্কটা ঠিক কত? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দেশের ধনীতম মন্দিরের তালিকায় শুরুর দিকে নাম থাকে তিরুপতির। বছরভর হীরে, জহরতে মুড়ে রাখা হয় বিগ্রহ। সোনার গয়না দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যেতে বাধ্য। ধনী ব্যবসায়ীদের দানে উপচে পড়ে দানবাক্স। তবে স্রেফ দান নয়, তিরুপতি মন্দিরের আয়ের উৎস রয়েছে আরও অনেক। তার অন্যতম প্রসাদী লাড্ডু।
এই মন্দিরের প্রসাদ এতই সুস্বাদু যে পুজো দেওয়ার পর অনেকেই বাড়ির জন্য ব্যাগ ভর্তি করে নিয়ে যান। তবে সম্প্রতি এই প্রসাদী লাড্ডু নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়েছে। অভিযোগ, তিরুপতি মন্দিরের প্রসাদী লাড্ডু তৈরিতে ব্যবহার হয় গরুর চর্বি। প্রথমে অভিযোগ তোলেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। পরে ল্যাব টেস্ট রিপোর্টে তাঁর দাবিকেই মান্যতা দেওয়া হয়। লাড্ডু পরীক্ষা করে জানা যায়, তার মধ্যে গরুর চর্বি, মাছের তেল, পাম তেল ইত্যাদি অনেক কিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। সরাসরি নয় অবশ্যই। তবে লাড্ডু তৈরিতে যে ঘি ব্যবহার করা হয় তাতেই নাকি পশুর চর্বি হদিশ মেলে। ঘটনার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট অবধি। একইসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই ঘটনাকে সামনে রেখে অভিযোগ পালটা অভিযোগ আনতে থাকে অপরপক্ষের বিরুদ্ধে। তবে তিরুপতির ভক্তরা সেদিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। বিতর্কের আবহেও মন্দিরে ভিড় এতটুকু কমেনি। প্রসাদ বিক্রিও না। জানা যাচ্ছে, বিতর্কের মাঝেও বিগত চার দিনে প্রায় ১৪ লক্ষ লাড্ডু বিক্রি হয়েছে মন্দির থেকে। ভক্তরা আগে যেভাবে কিনতেন এখনও সেই একইভাবে লাড্ডু কিনছেন বলে দাবি মন্দির কর্তৃপক্ষের। বিগত কয়েকদিনের লাড্ডু বিক্রির হিসাব দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ আরও একবার বোঝাতে চেয়েছে, লাড্ডুতে পশুর চর্বি থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুল।
আসলে, তিরুপতি মন্দিরের এই লাড্ডু স্বাদের জেরেই অধিক জনপ্রিয়। প্রতিদিন লক্ষাধিক ভক্ত মন্দিরে পুজো দেন। সেইমতো মন্দিরে লাখ লাখ লাড্ডু তৈরি করা হয়। আর থেকে মোটা টাকা আয় হয় মন্দিরের। হিসাব বলছে, বছরে ১২ থেকে ১৩ কোটি লাড্ডু বিক্রি হয় এই মন্দিরে। বিভিন্ন আকারের লাড্ডুর দামও আলাদা। তবে সামগ্রিক গড় হিসাব করলে টাকার অঙ্কটা দাঁড়ায় বছরে ৫০০কোটি। শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই সত্যি। তিরুপতি মন্দির স্রেফ প্রসাদ বিক্রি করেই বছরে এতটাকা উপার্জন করে। তবে খরচও নেহাতই কম হয় না। কর্তৃপক্ষের দাবি, লাড্ডু তৈরির জন্য প্রায় বছরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা খরচও হয় তাঁদের। মূলত ঘি তৈরিতেই যা খরচা। তবে এবার সেই ঘি-এর কারণেই বিতর্কে জড়িয়েছে তিরুপতি মন্দিরের লাড্ডু। ভক্তরা যতই সেদিকে কান না দিক, সনাতনীরা একে অনাচার বলেই মনে করছেন। তাই এই বিতর্কের জল কতদূর গড়ায়, কিংবা শীর্ষ আদালত বিষয়টি নিয়ে কী রায় দেয় সেটাই দেখার।