ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে। আর তাতেই কপালে জুটেছে চরম শাস্তি। একেবারে গরম চামচ দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে খুদের পায়ে। আর এমন শাস্তি দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষই। কোথায় ঘটল এমন কাণ্ড? আসুন শুনে নিই।
অপরাধ করলে শাস্তি পাওয়াই স্বাভাবিক। তবে লঘু পাপে গুরু দন্ড একেবারেই কাম্য নয়। অথচ এখানে ঘটেছে ঠিক তেমনটাই। নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে না ওঠার শাস্তি হিসেবে গরম চামচ দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে খুদের পায়ে। তাও একজন নয়, এই শাস্তি পেতে হয়েছে ১২ জন খুদে পড়ুয়াকে।
আরও শুনুন: বাচ্চারা রেস্তরাঁয় দুষ্টুমি করলে অতিরিক্ত চার্জ! কোথায় চালু এমন নিয়ম?
ঘটনাটি গুজরাটের। সেখানকার এক আবাসিক স্কুলেই সম্প্রতি এমন কাণ্ড ঘটেছে। তবে আবাসিক হলেও, একে ঠিক স্কুল বলা চলে না। জানা গিয়েছে, সেখানে মূলত বেদ, উপনিষদ এইসবের পাঠ দেওয়া হত। খানিকটা আগেকার দিনের গুরুকুলের মতোই ছিল এই প্রতিষ্ঠান। নিয়মকানুনের দিক দিয়েও তা যথেষ্টই গোঁড়া। তাই শাস্তির ক্ষেত্রেও মানা হত প্রাচীন পন্থাই। গুজরাটের খেরোজ গ্রামের এই প্রতিষ্ঠানে মূলত স্থানীয় উপজাতির ছেলেমেয়েরাই পড়তে আসত। জানা গিয়েছে, যে বেসরকারি সংস্থা এই প্রতিষ্ঠান চালাতেন তাঁরাই এখানে পড়তে পাঠানোর জন্য স্থানীয়দের বোঝাতেন। সেইসঙ্গে এই স্কুলে থাকার সুবিধা রয়েছে এ কথাও প্রচার করতেন তাঁরা। সেইমতো স্থানীয় অনেকেই ভরসা করে নিজেদের সন্তানকে এখানে পড়তে পাঠাতেন। কিন্তু পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে পড়ুয়াদের উপর যে এমন অত্যাচার চালানো হয় সে ব্যাপারে কোনও ধারণা ছিল না কারওর।
আরও শুনুন: বাধা নয় ঋতু! দেশের এই মন্দিরে গর্ভগৃহে পূজার অধিকার কেবল মহিলা পুরোহিতদেরই
কিছুদিন আগে স্থানীয় এক অভিভাবক কোনওভাবে জানতে পারেন এই স্কুলে পড়ুয়াদের বিভিন্ন রকমের কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়। যাচাই করতে তিনি তখনই হাজির হন ওই আবাসিকে। সেখানে গিয়ে সত্যিই দেখেন তাঁর সন্তান সহ আরও অনেকের পায়ের বিভিন্ন জায়গায় পোড়ার দাগ রয়েছে। কিন্তু কী হয়েছে জানতে চাইলে, খুদের দল কার্যত চুপ থাকে। স্পষ্টই বোঝা যায়, কোনও অজানা ভয় কাজ করছে তাদের মধ্যে। তবে কিছুক্ষণ পর ওই খুদে নিজেই সবটা জানায়। তার অভিযোগ, ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় স্কুলের প্রধান গরম চামচ দিয়ে তাদের পায়ে ছ্যাঁকা দিয়েছে। সে একা নয়, এই শাস্তি পেয়েছে আরও ১১ জন সতীর্থ। খুদের অভিযোগ শুনে রীতিমতো চটে যান ওই অভিভাবক। সোজা পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানান তিনি। অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। সেখানেই দেখা যায়, ওই আবাসিকের নাম সরকারি খাতাতেও নথিভুক্ত নেই। সেটি সম্পূর্ণ ভাবে আনরেজিস্টার্ড একটি প্রতিষ্ঠান। একইসঙ্গে যার নামে অভিযোগ, অর্থাৎ ওই গুরুকুলের প্রধানকেও আটক করে পুলিশ। তবে ঘটনার তদন্ত এখনও জারি রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে বলতেন ওই কর্তৃপক্ষের সদস্যরা। তারা দাবি করত, দশম শ্রেণি অবধি পড়ুয়ার সমস্ত দায়িত্ব তাদের। কিন্তু সেখানে এই ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়, তা ঘুণাক্ষরেও জানতেন না কেউ। তাই খুদের দলকে শাস্তি দেওয়ার ঘটনায় সরগরম গুজরাটের ওই এলাকা।