কথায় বলে, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় আর উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। বাস্তবিক, যুদ্ধ বাধে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের, কিন্তু তার অভিঘাতে তছনছ হয়ে যায় সাধারণ দেশবাসীর জীবন। এমনকি রেহাই পায় না শিশুরাও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও ঘটছে তেমনটাই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
যুদ্ধ মানেই বাতাসে বারুদের গন্ধ। যুদ্ধ মানেই মৃত্যুদূতের মতো ছুটে আসা গোলাগুলি। যুদ্ধ মানেই মৃত্যুর বুলেটিন। সভ্যতা যতই উন্নতির শিখরে পৌঁছে যাক, এখনও সে লিখে চলেছে যুদ্ধের ইতিহাস। আর সেই যুদ্ধের আগুনে তছনছ হয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়া, ভালবাসা আনন্দ দুঃখের সব গল্প। পুড়ে যাচ্ছে শৈশবও।
আরও শুনুন: ইউক্রেনের যুদ্ধে যোগ দিয়ে শহিদ ১২ সন্তানের মা, গর্বিত পরিবার
আর ঠিক তেমনটাই বর্তমানে ঘটে চলেছে ইউক্রেনের বুকে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখ হঠাৎই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে রাশিয়া। আক্রমণ আছড়ে পড়ে রাজধানী কিয়েভের উপর। স্বাভাবিকভাবেই, এই হঠাৎ ঘনিয়ে আসা যুদ্ধের আঁচ রেহাই দেয়নি শিশুদেরকেও। যুদ্ধের দরুন আচমকাই বদলে গিয়েছে তাদের রোজকার অভ্যস্ত জীবনযাপন। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অনেককেই দেশ ছেড়ে পাড়ি দিতে হয়েছে অচেনা কোনও জায়গায়। এমনকি যুদ্ধে নিহতদের তালিকার দিকেও যদি তাকানো যায়, সেখানেও খুঁজে পাওয়া যাবে একাধিক শিশুর নাম। যুদ্ধের ২১ দিনের মাথায় ক্ষয়ক্ষতির হিসেবনিকেশ থেকে স্পষ্ট জানা গিয়েছিল, যুদ্ধের কোল্যাটারাল ড্যামেজ হিসেবে মৃত্যু হয়েছে ১০৩টি শিশুর। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ঘোষণা করেছিলেন, রাশিয়ার হামলার ফলেই মৃত্যু হয়েছে এই শতাধিক শিশুর।
আরও শুনুন: ‘অপারেশন গঙ্গা’ মিশনে শামিল হয়ে যুদ্ধের দেশে ভারতের মেয়ে! বাঁচিয়ে এনেছেন ২৫০ পড়ুয়াকে
সম্প্রতি ইউনিসেফ এক পরিসংখ্যানে জানিয়েছিল, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রাণভয়ে ইউক্রেন ছেড়েছেন কমপক্ষে ৩০ লক্ষ মানুষ। ছিন্নমূল মানুষের যে বিপুল ঢল নেমেছে, তার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নাবালক, এমন কথাও জানিয়েছিল সেই রিপোর্ট। সেই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছিল, প্রতি মিনিটে উদ্বাস্তু হয়ে যাচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের ৫৫ জন শিশু, অর্থাৎ সংখ্যাটা পৌঁছে গিয়েছে সেকেন্ডে প্রায় একজনে। আর এবার জানা গেল, কেবল নিজেদের শিকড় নয়, প্রাণটুকুও আর নিরাপদ নয় সে দেশের শিশুদের। কারণ স্কুল, হাসপাতাল, শেল্টার, যে কোনও জায়গায় আছড়ে পড়ছে রুশ মিসাইল। ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে একশোরও বেশি হাসপাতাল, জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
যুদ্ধের অনিবার্য ফল হয়ে আসে মানুষের প্রাণহানি। কিন্তু যে শিশুদের প্রাণ অকালেই কেড়ে নিল মানুষেরই তৈরি করা যুদ্ধ, তাদের মৃত মুখ কি যুদ্ধ বন্ধ করার যথেষ্ট কারণ নয়?