পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করছে? এদিকে তো আবার করোনার কাঁটা! তা এ সময় বেড়াতে যাওয়া কি ঠিক হবে? কী বলছেন চিকিৎসকরা? ট্যুর আয়োজকদের বক্তব্যই বা কী?
পুজো মানেই বাঙালির বেরিয়ে পড়া। বছরের এই একটা সময় কাছেপিঠে কোথাও ঘুরে আসতে চান প্রায় সব্বাই। করোনার চোখরাঙানি গতবার জল ঢেলেছিল সেই ইচ্ছেতেই। এবার আবার আশঙ্কা থার্ড ওয়েভের। তাহলে? এবার কি পুজোয় ব্যাকপ্যাক তুলেই রাখবেন? নাকি বেরিয়ে পড়বেন?
বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলছেন, অতিমারীর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই, বেড়াতে যাওয়া উচিত। কারণ, বিভিন্ন পরিবেশে বেড়াতে গেলে, নানা ধরনের ভাইরাস মিউট্যান্টের সংস্পর্শে আসা যায়। তাতেই বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
এমনিতেও উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের হার ছিল যৎসামান্য। তাই মিজোরাম, মণিপুর বা সিকিম – এইসব জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক কম। কিন্তু তৃতীয় ঢেউ-এর মধ্যে এরকম জায়গায় ঘুরতে যাওয়াও কি ঠিক হবে! মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ব্রতেশ দাস বলছেন , ‘থার্ড ওয়েভে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। গতবার শিশুদের সংক্রমণের হার ছিল তিন শতাংশ। সেটা বেড়ে হতে পারে দশ শতাংশ। এছাড়া ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট আসছে, ফলে বাড়তে পারে সংক্রমণ । পরিসংখ্যান আদতে কি হবে! সেই বিষয়ে যথাযথ জানানো কঠিন, বড়জোর অনুমান করা যেতে পারে। আপাতত পরিস্থিতি যা, ঘুরতে যাওয়া বা বেড়াতে যাওয়াকে একটা সেকান্ডারি বিষয় হিসেবে দেখা উচিত।’
আরও শুনুন: নেটদুনিয়ায় সুরক্ষিত থাকতে কতটা ঘনঘন বদলে ফেলা উচিত Password? জানালেন Sundar Pichai
তবে করোনা যতই ভয় দেখাক, ভ্রমণপিপাসু বাঙালি কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে নেই। পূর্ব রেলওয়ের টিকিট বুকিং-এর তথ্য জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করে ফেলেছেন অনেকেই। তবে অন্য রাজ্যে যে কোনও সময় হঠাৎ লকডাউন হলে ফিরতে সমস্যা। তাই তাঁরা চাইছেন এবারের ট্রিপটা হোক রাজ্যের মধ্যেই। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার সমস্ত টিকিটই প্রায় বুকড। অনেকে ট্রেনের বদলে যেতে চাইছেন বাসে বা গাড়িভাড়া করে। কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ভ্রমণ-সংস্থা কুণ্ডু স্পেশালের মুখপাত্র শুভেন্দু পুরকাইত বলছেন, ‘পুজোর সময়ে বেড়াতে যাওয়া নিয়ে আগ্রহী মানুষদের প্রচুর ফোন এসেছে তাঁদের দপ্তরে। কিন্তু সেপ্টেম্বর নাগাদ থার্ড ওয়েভ আসার আশঙ্কায় এখনও পুজোর কনডাক্টেড ট্যুর নিয়ে কিছু ভাবেনি কুণ্ডু স্পেশ্যাল। তবে অগস্ট আর সেপ্টেম্বরে কিছু ট্যুর হবে। পুজোর সময় বেড়াতে যাওয়ার বিষয়টি এখনও আলোচনার স্তরেই রয়েছে।’
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্র্যাভেল অ্যাসসিয়েশন’-এর সভাপতি নীলাঞ্জন বসু বললেন, ‘বেড়াতে যাওয়াটা যেমন দরকার, তেমনই সেফটি এন্ড সিকিউরিটি জরুরি। আমরা ট্র্যাভেল এজেন্ট অ্যাসসিয়েশন থেকে কখনোই বলব না সমস্ত সুরক্ষাবিধি চুলোয় দিয়ে বেড়াতে বেরিয়ে পড়ুন। মানুষ বেরবেই। কিন্তু একটু সুরক্ষাবিধি মেনে বেরতে হবে, আমাদের তরফ থেকে অনুরোধ। সরকারকে অনুরোধ করব বেড়াতে যাওয়া নিয়ে একটা স্পষ্ট গাইডলাইন প্রকাশিত হোক।’
আইআইটি কানপুরের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ভারতে এসে পড়বে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ। ফলে সতর্কতায় ঢিলে দেওয়া মোটেই চলবে না। জানানো হচ্ছে, অক্টোবরেই চূড়ান্ত রূপ নেবে থার্ড ওয়েভ, কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ-এর থেকে সংক্রমণের হার খানিক কমবে। দ্বিতীয়ত, ভাইরাসের চরিত্র বদল বা মিউট্যান্ট হয়ে সেকেন্ড ওয়েভের থেকে অনেক বেশি ভয়ানক রূপ নেবে থার্ড ওয়েভ। তাই সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন, ফিজিক্যাল ডিসট্যান্সিং ইত্যাদি মানতে হবে নভেম্বর পর্যন্ত। থার্ড ওয়েভে সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছবে অক্টোবরের শেষে। তাই বেড়াতে গেলে নিজের এবং অন্যদের সুরক্ষার জন্য, অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।
একদিকে বেড়ানো আর অন্যদিকে সুস্থ থাকা – দুই-ই যদি একযোগে সম্ভব হয়, তাঁর থেকে ভালো পুজো কাটানো আর কী হতে পারে!