টেস্ট ম্যাচ। রোজই একটু একটু করে স্কোর বাড়ছে। কিন্তু সমস্যাাটা হল যখন সেঞ্চুরি পেরোল। স্কোরবোর্ড আর নিতে পারছে না। সেখানে ১০০ দেখানোই যাচ্ছে না কোথাও কোথাও। কার কথা হচ্ছে জানেন? আর কেউ নয়, ইনি হলেন পেট্রোল।
লম্বা সময় ক্রিজে টিকে থেকে সেঞ্চুরি হাঁকালেন তিনি। এর আগে অবশ্য বিভিন্ন জেলায় সেঞ্চুরি করেছেন। সবশেষে কলকাতায়। গত কয়েকমাস থেকেই বাড়ছিল স্কোরবোর্ড। বোঝাই যাচ্ছিল এবার আর সেঞ্চুরি আটকানো যাবে না। শেষমেশ সেটাই হল। জীবনের এই ওঠাপড়া এতটাই গায়ে লেগেছে, জনজীবনের এমন কাটাছেঁড়া হয়েছে, বোরোলিন আর কাজে লাগছে না। পুরনো দিনের কেউ কেউ বলছেন, সেই সময় নাকি এক লিটার পেট্রোলের দাম ছিল পাঁচ সিকে। আর নতুন গাড়ি কিনলেই তাতে বিনা পয়সায় ভরে দেওয়া হতো পেট্রোল। তারও আগে পেট্রোলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৭২ পয়সা। সময় তো বদলায়, কিন্তু এভাবে বদলাবে কে বা জানত!
তা, জ্বালানির এই জ্বালাময়ী রূপ কেন? এখানে কি থামবে মূল্যববৃদ্ধি? নাকি আবার দৌ়ডবে? এরকম কত প্রশ্নই মাথার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরও পড়ুন : পুরীর আদলে জগন্নাথ মন্দির এবার কলকাতাতেই, জেনে নিন খুঁটিনাটি
গত দুমাসে ৩৬ বার দাম বেড়েছে পেট্রোলের। পাম্প মালিকরা বোধহয় দুপুরুষ আগেও এতবার দামের ওঠাপড়া দেখেননি। অভ্যামস নেই তাঁদেরও। ‘কী করবেন’, ‘কী করবেন না’ ভাবতে ভাবতে আধঘণ্টার ধর্মঘটও ডেকে ফেলেছিলেন।তার ওপর আর এক বিপদ। রাজ্যের অনেক পেট্রোল পাম্পেই এখনও রয়েছে পুরনো ডিসপেন্সিং মেশিন। যেখানে তিন অঙ্কের কোনও জায়গাই নেই। মানে পেট্রোলের সেঞ্চুরি দেখানোর স্কোরবোর্ডটাই নেই। বুঝুন ঠ্যালা। নতুন দাম কাগজে লিখে সেঁটে দিতে হচ্ছে ডিসপেন্সিং মেশিনের গায়ে। সেইসঙ্গে তোড়জোড় শুরু হয়েছে নতুন ডিসপেন্সিং মেশিন আনার।
আমাদের দেশে পেট্রোল-ডিজেলের মতো পেট্রোপণ্যের দাম নির্ভর করে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের উপর। জ্বালানির ব্যদবহারে আমাদের দেশের স্থান তৃতীয়। ভারতকে আমদানি করতে হয় বেশিরভাগটাই, প্রায় ৮৩ শতাংশ। ফলে বিদেশের বাজারে তেলের দাম বাড়লে আমাদের পকেটে টান তো পড়বেই। বিদেশ থেকে আমদানি করা অপরিশোধিত তেল দেশে পরিশোধন করে ভারতীয় পেট্রোপণ্য সংস্থা। সেই সঙ্গে আমদানি শুল্ক বাড়লেও তেলের দামও বাড়ে। কখনও এই ওঠাপড়া টাকার বিনিময় মূল্যেথর ওপরও নির্ভর করে। আর করোনা? সেই বা কেন বাদ যায়? পাবলিক ট্রান্সপোর্টের বদলে বেড়েছে ব্যরক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার।
আরও পড়ুন : সঙ্গে নেই ছাতা, তবু ভরা বর্ষায় মাথা বাঁচানোর উপায় কী?
চাহিদা বেড়েছে পেট্রোল, ডিজেলেরও। এর পরও রয়েছে দেশের করব্য্বস্থা আর ভরতুকি। প্রতিবেশী দেশ নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশেও পেট্রোলের দাম কম। পাকিস্তানে পেট্রোলের দাম কমবেশি ৫১ টাকা ১৪ পয়সা। অন্যদিকে, বাংলাদেশে তেলের দাম সেদেশের টাকায় ৮৯ টাকা। নেপথ্যেশ করব্যাবস্থা।
এত কিছু জেনে কী হবে বলুন তো? মোটের ওপর তো সেই একটাই কথা। তেলের দাম বাড়বে, আমাদের বুকে ব্যথাও বাড়বে, সেই ব্যোথা চেপে রেখে গাড়ির ট্যাঙ্কে তেলও ভরতে হবে। করোনার প্রকোপে নাজেহাল জীবনে জ্বালানির জ্বালা নিয়েই চলতে হবে। গাড়ি এখন আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অভ্যাজস। পেট্রোল পাম্পে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস বুকে নিয়ে সাধের গাড়িতে আমরা রোজ তেল ভরব। তবেই না ‘চলতি কা নাম গাড়ি’।