ধর্মনিরপেক্ষতা এই দেশে ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। নানা ঘটনার সূত্রে উঠে আসে এরকম মতামত। আর সেই প্রসঙ্গেই অনেকেই সওয়াল করেন যে, নেহরু আমলের দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা যে বাতাবরণ ছিল, তা ফিরিয়ে আনা উচিত। তবে ভিন্নমত পোষণ করলেন জেএনইউ-এর এক অধ্যাপিকা। কী তাঁর মত? আসুন শুনে নিই।
ধর্মনিরপেক্ষতা কি দিকভ্রান্ত! সাম্প্রতিক সময়ের প্রেক্ষিতে এরকম ভাবনা প্রায়শই উঠে আসে। তা অমূলক নয়। তবে, তলিয়ে দেখলে এই অবস্থার স্বরূপ স্পষ্ট হয়। এবং তা অনেক মৌলিক প্রশ্নের মুখোমুখিই দাঁড় করিয়ে দেয় আমাদের। এ বিষয়ে দীর্ঘ এবং বিস্তারিত কাজ করেছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা নিবেদিতা মেনন। সম্প্রতি প্রকাশিত হল তাঁর বই Secularism as Misdirection: Critical Thought from the Global South, আর সেই প্রেক্ষিতেই দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে উঠে এল একাধিক বিশ্লেষণ।
আরও শুনুন: বিদেশের ‘অযোধ্যা’ থেকে আসছে মাটি, মিশে যাবে দেশের রাম মন্দিরে
বইপ্রকাশ উপলক্ষে দীর্ঘ বক্তৃতায় ধর্মনিরপেক্ষতার স্বরূপ বুঝিয়ে দেন তিনি। নানা আঙ্গিক থেকেই বিষয়টি উঠে আসে। পরবর্তী পর্বে, তাঁর কাছে যায় একটি বিশেষ প্রশ্ন। তা হল, সাম্প্রতিক সময়ের প্রেক্ষিতে কি তাহলে নেহরু-আমলের ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণায় আবার ফিরে যাওয়া উচিত? জবাবে তিনি বলেন, কোথাও ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সত্যি বলতে, ফিরে যাওয়ার মতো কোনও পরিসরও নেই। নিজের এই বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দেন তিনি। কীরকম ছিল সেই ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা? নেহরু আমলে ড্যামগুলোকেই মন্দির হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল। সেই বাঁধ নির্মাণের দরুণ কী হয়েছিল, তারও সাক্ষ্য দেয় ইতিহাস। ওই একটা ব্যাখ্যাই কীভাবে মানুষের জমি নিয়েছিল, বাস্তুচ্যুত করেছিল তা-ও তো অজানা নয়। পুঁজিবাদী নির্মাণের তা একটা দিক। সেই ধারণার জলহাওয়াই ক্রমে এমন একটা বিশ্বাস গড়ে দিয়েছিল, যাতে মানুষ তাঁদের বসত দিয়েছিল, যেখানে কিনা শহর গড়ে উঠেছে, শপিং মল গড়ে উঠেছে। তাঁর মতে, এই দেশের যে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী রাজনীতি, তার সঙ্গে নেহরু-আমলের ধর্মনিরেপেক্ষতার ভাবনার বিরোধ ছিল না বরং সখ্যই ছিল। আর তাই অধ্যাপিকার অভিমত, পিছু ফিরে তাকানোর আর কোনও অর্থ নেই। আমাদের দেশে বাম, ধর্মনিরপেক্ষ এবং নারীবাদী ভাবনাধারার একটা প্রবাহ ছিল। যা কিনা নেহরু-আমলের এই ধর্মনিরপেক্ষতাকে যথেষ্ট সমালোচনা করতে পারত। তবে, অধ্যাপিকার মতে গত ১০ বছরে তা ক্রমে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি হিন্দু-গরিষ্ঠ ধারণা প্রকৃতপক্ষে যে ভারতকে ব্যাখ্যা করে না, তা জানাতেও তিনি দ্বিধা করেননি। বরং এই দেশ নানা গোষ্ঠীর সংখ্যালঘুদের সম্মিলন। এমনটাই তাঁর মত। নিঃসন্দেহে তাঁর এই জোরালো মতামত আমাদের দেশ ও দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাকে নতুন আলোয় ভাবতে শেখাবে।