চলন্ত ট্রেনেই ইফতার সারলেন কয়েকজন মুসলিম যাত্রী। তাঁদের দেখে এতটুকু বিরক্ত হলেন না কামরায় উপস্থিত হিন্দুরা। বরং তাঁরাই ব্যবস্থা করলেন ফল, মিষ্টি, শরবতের। কোথায় ঘটেছে এই কাণ্ড? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
অফিস টাইমের লোকাল ট্রেন। তিলধারণের জায়গা নেই বললেই চলে। কোনওক্রমে দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা। হঠাৎ কামরার মাঝ বরাবর জায়গা রেখে দুদিকে সরে গেলেন বেশ কয়েকজন যাত্রী। সেই ফাঁকা জায়গায় আসন পেতে বসে পড়লেন কয়েকজন। তাঁরা যে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ, তা পোশাক দেখে স্পষ্ট বোঝা যায়। চলন্ত ট্রেনেই তাঁরা নামাজ পড়লেন, ভাঙলেন রোজার উপবাস। তারপর তাঁদের সঙ্গে হইহই করে ইফতার সারলেন ওই কামরায় উপস্থিত বাকি হিন্দুরাও।
আরও শুনুন: হিন্দুর সন্ন্যাসের উপবাসের পাশেই মুসলমানের রমজান, দুই ধর্মের অপূর্ব সাদৃশ্য চৈত্রের বাংলায়
নিশচয়ই ভাবছেন কোনও কাল্পনিক দৃশ্যের কথা বলছি। অন্তত সারা দেশে যেভাবে ধর্মীয় ভেদাভেদের রাজনীতি শুরু হয়েছে সেখানে এই ধরনের দৃশ্য কল্পনা করাও কঠিন। অথচ এমনটা ঘটেছে বাস্তবেই। তাও আবার মুম্বাই শহরে। মহারাষ্ট্রের এই শহর যেমন একাধিক হিন্দু সংগঠনের গড় হিসেবে বিখ্যাত, সেখানেই ধরা পড়েছে এমন সম্প্রতির ছবি। যদিও এই ঘটনা নতুন নয়। প্রতি বছরই রমজানের সময় মুসলিম যাত্রীদের প্রতি এমন সৌহার্দ্যের পরিচয় দেন হিন্দু যাত্রীরা। আর এমনটা হবে নাই বা কেন, তাঁরা তো সারা বছর একসঙ্গে যাতায়াত করেন। কারও কারও কাছে তো ট্রেনটা দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে উঠেছে। তাই সেখানে আলাদা করে হিন্দু মুসলিমের ভেদ নেই। সকলেই আত্মীয়তার বন্ধনে আটকে রয়েছেন। চলতি বছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রায় প্রতিদিনই অসম্ভব ভিড় থাকা সত্ত্বেও ট্রেনের কামরায় থাকা মুসলিম যাত্রীদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করে দেন বাকিরা। বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত এইসব যাত্রীরা নিজেদের সামর্থ্য মতো ফল মিষ্টি কিংবা শরবতের ব্যবস্থাও করেন। তবে সেখানে নিজেদের জাহির করার কোনও উদ্দেশ্য থাকে না। তাই কে কী দান করছেন তা কার্যত অজানাই থেকে যায়। যা থাকে তা হল অনাবিল আনন্দ। ইফতারের সময় একসঙ্গে মিলে খাওয়াদাওয়াও করেন তাঁরা সকলেই।
আরও শুনুন: বদলাচ্ছে ভাবনা! পুরুষ সঙ্গী ছাড়াই হজে যাচ্ছেন ৪৩০০ মুসলিম মহিলা
অন্যদিকে নবরাত্রি বা গণেশ পুজোর সময় কার্যত এই একই ভূমিকা পালন করেন মুসলিমরা। তাঁদের ধর্মে পৌত্তলিকতার নিয়ম নেই। অথচ নির্দ্বিধায় কোনও হিন্দুর বাড়িতে গণেশ মূর্তি পৌঁছে দিতে সাহায্য করেন একজন মুসলিম যাত্রী। কিংবা নবরাত্রির সময় তাঁরা নিজের থেকেই ফল মিষ্টি উপহার দেন হিন্দুদের। তাঁরাও হাসিমুখে সেই উপহার গ্রহণ করেন। সেখানে এতটুকু ধরা পড়ে না ভেদাভেদের ছাপ। ধর্ম আলাদা হলেও, সম্প্রীতির বার্তা যে ভেদাভেদকে ছাপিয়ে উঠতে পারে, সে কথাই প্রমাণ করে দিয়েছেন এই মানুষেরা।