একদিকে গরিবের জন্য ঘর গড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। অন্যদিকে একের পর এক মানুষের ঘর গুঁড়িয়ে যাচ্ছে এই দেশেই। একই দেশের দুই ছবিই ফুটে উঠছে সাম্প্রতিক সমীক্ষায়। যা বলছে, এক বছরেই দেশে ঘর হারিয়েছেন অন্তত ৫ লাখ মানুষ। শুনে নেওয়া যাক।
কখনও বস্তি সাফাই, কখনও অনুপ্রবেশ হঠানো, কখনও আবার শহরের সৌন্দর্যায়ন। এমন নানা যুক্তির মুখে পড়েই নিজেদের ঘর হারাচ্ছেন দেশের সাধারণ মানুষ। সরকারি নির্দেশেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়ি। যার মোটামুটি হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে, কেবল ২০২৩ সালেই দেশে উদ্বাস্তু হয়েছেন অন্তত ৫ লক্ষ মানুষ।
আরও শুনুন: উদ্ধার করেন সুড়ঙ্গে আটক শ্রমিকদের, ‘এই তো পুরস্কার!’ সরকার বাড়ি ভাঙায় বললেন ব্যক্তি
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, শুধু এই এক বছরেই বাড়ি হারিয়েছেন প্রায় ৫ লক্ষ ১৫ হাজার মানুষ। যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। আর এই বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে যে কারণ দেখিয়ে, তা হল বস্তি সরানো, অনুপ্রবেশ হঠানো ও শহরের সৌন্দর্যায়ন। প্রায় ৫৮.৭ শতাংশ বাড়ি ভাঙার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে এই যুক্তি। এর বাইরে ৩৫ শতাংশ বাড়ি ভাঙা পড়েছে সরকারের কোনও গঠনমূলক পরিকল্পনার জন্য। মাত্র ৪.৭ শতাংশ বাড়ি পরিবেশ সংক্রান্ত প্রকল্পের জন্য ও বিপর্যয় মোকাবিলার দরুন ০.৭ শতাংশ বাড়ি ভাঙা পড়েছে। এনকাউন্টারে অভিযুক্তদের মেরে ফেলা এবং আন্দোলনকারীদের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া তো নিয়মে পরিণত করা হয়েছে বহু রাজ্যে। এমনকি বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত মামলায় খোদ বিচারপতিকেও এমন কথা বলতে শোনা গিয়েছে। এখানে আরও একটি প্রশ্ন উঠে আসছে, কোন নির্মাণ বেআইনি আর কোনটা নয়। যেমন সম্প্রতিই উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করার দলে থাকা ওয়াকিল হাসান তাঁর বাড়ি হারিয়েছেন। জানা যাচ্ছে, সরকারের এক উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার প্রস্তাবিত ভূখণ্ডের মধ্যেই পড়ে গিয়েছে তাঁর বাড়িটি। আর সেই কারণেই আচমকাই মাথার উপর থেকে ছাদ সরে গিয়েছে তাঁদের। যদিও ২০০৮ সালেই ওই এলাকাটিকে আইনি কলোনির শংসাপত্র দেওয়া হয় বলে ওয়াকিল হাসান জানিয়েছেন। এমনকি সেখানে বাড়ি তৈরি করতে ব্যাঙ্ক ঋণও দিয়েছিল। সেখানে গোটা এলাকার মধ্যে একটি বাড়িই কীভাবে বেআইনি হয়, সে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। প্রশ্নের উত্তর মিলুক কিংবা না মিলুক, দেখা যাচ্ছে, নিজের মাথার উপর ছাদটুকু নিয়েও আর নিশ্চিন্ত হওয়ার উপায় নেই আমজনতার।
আরও শুনুন: রাষ্ট্রকে প্রশ্ন নয়! গণতন্ত্র চলছে?
যেখানে একদিকে আমজনতার জন্য বাড়ি গড়ে দেওয়ার প্রকল্প ঘোষণা করছে সরকারই, সেখানে সরকারের হাতেই বাড়ি হারানোর এহেন পরিসংখ্যান এক অদ্ভুত দ্বন্দ্বের ছবিই তুলে ধরছে। সে দ্বন্দ্বের কোনও উত্তর এ দেশ খুঁজে পাবে কি না, সেটাই দেখার।