শহরের রাস্তায় লাল মিছিল। পেরিয়ে যাচ্ছে রাজপথ। পেরিয়ে যাচ্ছে সেতু। না, তেমন কোনও রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা তাদের নেই। তবে আছে ঘরে ফেরার তাগিদ। আর সেই তাগিদ এমনই জোরদার, যে রাস্তা কে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে ওরা। ঠিকই ধরেছেন, ওরা পরিযায়ী। তবে শ্রমিক নয়, কাঁকড়া। প্রতি বছরই এই সময়টায় রাস্তা জুড়ে ঘরের দিকে যাত্রা শুরু করে কর্কট সেনা। সেই সময়টুকু জুড়ে গাড়িঘোড়ার সেই রাস্তায় নো এনট্রি। কোথায় দেখা মিলবে এই কর্কটবাহিনীর? আসুন, শুনে নিই।
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিসমাস দ্বীপ। বড়দিনের আগেই সান্টার পোশাকে সেজে উঠেছে সেই দ্বীপের পথঘাট, রাস্তা। কী করে? রাস্তা জুড়ে যে হেঁটে চলেছে কয়েক কোটি কর্কট-সেনা। লাল কাঁকড়ার চোখ ধাঁধানো মিছিল। অবশ্য সেনা হলেও ঘোরতর সংসারী তারা। সামনেই মিলনের মাস। তার আগেই ওদের পৌঁছতে হবে সমুদ্রে।
প্রথমে সমুদ্রের কিনারে এসে পড়বে প্রমীলাবাহিনী। তার পর তাদের অনুসরণ করে সৈকতে পৌঁছবে পুরুষ কাঁকড়ারা। যে যার গর্তে হাজার হাজার ডিম পেড়ে ফেলবে কর্কট-ঘরণীরা। তারাও জানে ঠিক কোন সময় গর্ত ছেড়ে দিতে হবে। কখন সে সব ডিম ফুটে বেরিয়ে আসবে ভবিষ্যতের সব কাঁকড়া-প্রজন্ম। এর পর থেকে কিন্তু সব দায়িত্ব কর্তব্য বাড়ির দায়িত্ববান পুরুষটির কাঁধেই।
আরও খবর: গাধার নাম অ্যালফাবেট, বইয়ের বোঝা পিঠে যারা পৌঁছে যায় প্রান্তিক এলাকায়
‘সে খবর রটে যায় হাওয়ার সুবাসে।’ না, সুবাসে না বুঝলেও বৃষ্টি ও চাঁদের অবস্থান দেখে ঠিক নিজেদের যাত্রার সময়- নির্ঘণ্ট ঠিক করে নেবে কাঁকড়ারা। যথাসময়ে পৌঁছে যাবে সমুদ্রের কাছে।
সেই হিসেবে এ মাস শেষ হওয়ার আগেই তাদের পৌঁছে যেতে হবে সমুদ্রে। তাই আপাতত লাল কাঁকড়াদের দম নেওয়ার ফুরসত নেই একটুও। আপাতত অস্ট্রেলিয়ার ক্রিসমাস দ্বীপের রাজপথ জুড়ে এই সব দায়িত্ববান কাঁকড়াদের বিরাট মিছিল। অনেকটা হাল্লা সেনার মতোই তারা রাস্তার পর রাস্তা, সেতু, উড়ালপুল পার করে ছুটে চলেছে। প্রতি বছরই অক্টোবর-নভেম্বরের সময়টা এসব রাস্তা লালে লাল হয়ে যায়, কাঁকড়ায়।ইতিমধ্যেই রাস্তা জুড়ে পড়ে গিয়েছে বড় বড় বোর্ড, হোর্ডিং। তাতে বড় বড় অক্ষরে লেখা নো এনট্রি। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যানবাহন চলাচল। এমনকি পথচারীদের যাতায়াতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ।
আরও জানুন: স্রেফ একটি কুকুরের কারণেই দুই দেশের মধ্যে হল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, জানেন এই ঘটনা?
একটি সংস্থার রিপোর্ট বলছে, রবিবারের বাজারে অনেকেই কাঁকড়ার দৌড়াত্ম্যে বন্দি হয়ে পড়েছেন ঘরেই। দরজা, অফিস, উঠোন, রাস্তা জুড়ে এখন শুধু কাঁকড়াদেরই আধিপত্য। বাধ্য হয়েই অফিসযাত্রীদের নিতে হচ্ছে ঘুর-রাস্তা। গাড়ি পার্ক করার ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
কাঁকড়াদের জন্য চলার রাস্তা বানিয়ে দিচ্ছে মানুষ। এ ছবি যেন ভাবলেও স্বস্তি দেয় বলুন! এর জন্য বাহবা কিন্তু অবশ্যই প্রাপ্য ক্রিসমাস দ্বীপ প্রশাসনের। এক অস্ট্রেলিয় যেমন ফেসবুকে কাঁকড়া-মিছিলের ছবি দিয়ে লিখেছেন, “আরে মশাই ক্রিসমাস নয়, বলুন মেরি ক্র্যাবসমাস”। কেউ আবার বলছে ‘ক্র্যাবস লকডাউন’। তবে যাই বলুন, শীতের আগেই রাস্তা জুড়ে এমন রাঙা হয়ে আসা অকাল বসন্ত যে দিব্যি উপভোগ করছেন ক্রিসমাস দ্বীপবাসী, তা কিন্তু একবাক্যে মেনেছেন সকলেই।