পদপিষ্ট হওয়ার আতঙ্ক। কুম্ভ ছাড়লেন বহু ভক্ত। ফিরতে গিয়েও বিপত্তি। সমস্যার নাম, সেই ভিড়। সহায় হলেন স্থানীয় মুসলিমরাই। খুলে দেওয়া হল মসজিদের দরজা। সম্প্রতি এই ঘটনার ভিডিও নেটদুনিয়ায় ভাইরাল। কিন্তু আড়ালে রয়েছে কোন গল্প? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শাহী স্নানে শামিল হওয়ার দৌড়! কুম্ভের হুড়োহুড়ি প্রাণ কাড়ল অনেকের। ভয়ে-আতঙ্কে কুম্ভ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চাইলেন বাকিরা। কিন্তু এত মানুষ আচমকা ফিরতে চাইলে সমস্যা হবেই। হলও তাই। রাস্তাতেই আটকে পড়লেন বহু। এঁদের দিকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় মসজিদ। জল-খাবার এগিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় মুসলিমরা। সম্প্রতি এমনই এক ভিডিও নেটদুনিয়ায় ভাইরাল। শেয়ার করে সম্প্রীতির বার্তা দিচ্ছেন নেটিজেনরা। পালটা বিতর্কও টানছেন কেউ কেউ। কিন্তু ভাইরাল ভিডিও কি আদৌ সত্যি?
আরও শুনুন:
রক্তের সমুদ্দুর পেরিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ত্রিবেণী-স্নানে নারাজ ইউক্রেন, উঠল হনুমানের প্রসঙ্গ
ডিজিটাল যুগে ভাইরাল কনটেন্টের কমতি নেই। মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে যে কোনও ভিডিও। সত্য-অসত্য বিচারের সময় নেই! মুখোরোচক মনে হলেই শেয়ার চাই! ফলত এমন অনেক কিছুই ভাইরাল হয়ে যায়, যা না হলেই হয়তো ভালো হত। স্রেফ ভুয়ো খবরের জেরে সাম্প্রদায়িক অশান্তি শুরু হয়েছে, এমন ঘটনাও হামেশাই হয়ে থাকে। করোনা অতিমারির সময়ও এই ধরনের ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়ত ভালোমাত্রায় তাতে বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছু হত না। তবে কুম্ভমেলাকে কেন্দ্র করে যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে তা সত্যি। অন্তত সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি এমনটাই। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, হিন্দু ভক্তদের খাবার বিলি করছেন জনৈক মৌলবি। তাঁর সঙ্গে আরও অনেকে রয়েছেন। এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছেন ভক্তরা। পোশাক দেখে বোঝা যায়, এঁরা কুম্ভ থেকে ফিরছেন। তবে সকলের চোখেই আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। যেন প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারলে বাঁচেন! কেউ কেউ কেঁদে ফেলছেন, সেই ছবিও ধরা পড়েছে ভিডিওতে। আসলে, এঁদের অনেকেই কুম্ভমেলার ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার সাক্ষী। সামনে থেকে এত মানুষকে পদপিষ্ট হতে দেখে রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন তাঁরা। কেউ কেউ প্রিয়জনকেও হারিয়েছেন। ফলত তড়িঘড়ি কুম্ভ ছাড়া সিদ্ধান্ত। সমস্যা তাতেও। এত মানুষ একইসঙ্গে ফিরছেন, পথেও ভিড় ভালোই। তাই মাঝরাস্তায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন অনেকে। আর সেই সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন স্থানীয় মুসলিমরা। এমনিতে প্রয়াগ সংলগ্ন এলাকায় মুসলিমদের বাস ভালোমাত্রায়। মসজিদও রয়েছে একাধিক। এদিন সেই সমস্ত ইসলাম ধর্মস্থানের দরজাও খুলে দেওয়া হয়েছিল হিন্দু ভক্তদের জন্য। পাশাপাশি তাঁদের খাবার এবং জলের ব্যবস্থাও করেছিলেন মুসলিমরা।
:আরও শুনুন:
‘কেবল আমজনতার মৃত্যু কেন?’ কুম্ভের দুর্ঘটনায় প্রশ্ন মুসলিম নেতার, বললেন…
এর চাইতে ভালো সম্প্রীতির ছবি আর হতে পারে, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বিশেষ করে যে কুম্ভে মুসলিমদের ব্যবসা করা নিয়ে এত বিতর্ক হয়েছে, সেখানে হিন্দু ভক্তদের আশ্রয় দিচ্ছেন মুসলিমরা, তাও অবাক করতেই পারে। কিন্তু এটাই যে ভারতবর্ষের নিজস্বতা। এই প্রথম নয়, এর আগেও বহু ঘটনায় সম্প্রীতির নজির গড়েছেন এ দেশের মানুষ। কুম্ভের ক্ষেত্রেও তাই ব্যতিক্রমী ঘটনা বলতে নারাজ সেখানকার স্থানীয় মুসলিমরা। বরং কুম্ভমেলা একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ তাঁদের কাছেও, এমনটাই দাবি ওই মুসলিমদের। এর আগেও যতবার মেলা হয়েছে, হিন্দু ভক্তদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন তাঁরা। সেই সুযোগও তাঁরা পেতেন সহজেই। আসলে, প্রয়াগে পৌঁছতে গেলে বেশ কিছুটা রাস্তা মুসলিম এলাকার মধ্যে দিয়েই যেতে হত। প্রতিবছর সেখানেই নিজেদের সাধ্যমতো খাবার বা জল নিয়ে হাজির থাকতেন। এমনটাই দাবি দাবি স্থানীয় মুসলিমদের। তবে এবছর নাকি কুম্ভে যাওয়ার রাস্তা বদলে দেওয়া হয়েছিল। তাই আলাদা করে হিন্দু ভক্তদের জন্য কোনও সাহায্য করতে পারেননি তাঁরা। কিন্তু বিধি বাম! এমনই পরিস্থিতি তৈরি হল, যে এগিয়ে আসতে হল সেই মুসলিমদেরই। দুর্ঘটনার খবর পেতেই সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন তাঁরা। মেলায় না ঢুকলেও, নিজেদের ঘর-বাড়ি, স্থানীয় স্কুল, হাসপাতাল, এমনকি মসজিদের দরজাও খুলে দেন সকলে। মুসলিম চিকিৎসক মাঝরাতেই পথে নামেন অসুস্থদের চিকিৎসা করার স্বার্থে। কেউ কেউ বাইকে করে হিন্দু ভক্তদের পৌঁছে দেন গন্তব্যে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই সাহায্য করেছেন স্থানীয় মুসলিমরা। তাতে কারও কোনও বিরক্তি নেই। বরং সকলেই যেন বেজায় খুশি, অসহায় ভক্তদের সাহায্য করতে পেরে। নেটদুনিয়াও তাই ওই ভিডিওতে সম্প্রীতির বার্তা খুঁজে পেয়েছে। নেপথ্যের কাহিনি সবটা না জানলেও, ভিডিও শেয়ার করছেন অনেকেই।