সাম্প্রদায়িক অশান্তির আঁচ লেগেই রয়েছে দেশ জুড়ে। দিন কয়েক আগেই বহিষ্কৃত বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে আগুন জ্বলে উঠেছিল দেশ জুড়ে। সেই অশান্তির রেশ থামতে না থামতেই ফের ঘি পড়ে আগুনে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যকে সমর্থন করায় প্রাণ খোয়াতে হয় রাজস্থানের উদয়পুরের এক দরজির। একই রকম ঘটনা ঘটেছে মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতেও। এই সব অশান্তির আবহেই ইদ। আর তা কতখানি প্রভাব ফেলেছে ইদের বাজারে। কী বলছেন ব্যবসায়ীরা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
উদয়পুরে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে কানহাইয়া লাল নামে এক দরজিকে। সেই ঘটনার পর থেকেই তেতে রয়েছে দেশ। তার উপরে বহিষ্কৃত বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে নিয়ে আজমের দরগার খাদিম সলমন চিস্তির বিতর্কিত মন্তব্য সেই আগুনে যেন ঘি ঢেলেছে। সম্প্রতি নূপুর শর্মার মুণ্ডচ্ছেদের দাবি করে বসেন তিনি। ইতিমধ্যেই খাদিম চিস্তিকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। তবে তার প্রভাব পড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। এলাকায় যেন একটা থমথমে ভাব। আর তাতেই মার খাচ্ছে ব্যবসা।
আরও শুনুন: পঁচিশ বছরের আত্মীয়তা, হিন্দু কর্মচারীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করল মুসলিম পরিবারই
জ্ঞানবাপী বিতর্কের সময়ও এই ইঙ্গিত মিলেছিল। মন্দির-মসজিদ বিতর্কের অভিমুখ যাই হোক না কেন, এলাকার ব্যবসায়ীরা টের পেয়েছিলেন, বিতর্কের জেরে মন্দা চলছে ব্যবসায়। সে-কথা গোপন করেননি তাঁরা। একই মত রাজস্থানের ব্যবসায়ী মহলেরও। একের পর এক বিতর্ক, যা ক্রমশ ইন্ধন দিচ্ছে সাম্প্রদায়িকতাকে, তাতে দেশের সংহতির ক্ষতি যেমন হচ্ছে, তেমনই টান পড়ছে মানুষের রুটি-রুজিতেও। নানা বিতর্কের মধ্যেই দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে বকরি ইদ। এই সমস্ত ঘটনার প্রভাবই যে ইদের বাজারে পড়েছে, তা এক বাক্যে মেনেছেন উদয়পুর এলাকার সমস্ত ব্যবসায়ীরা। খাদিম চিস্তির ওই হিংসাত্মক মন্তব্যের পর থেকেই কেমন যেন ভয়ে ভয়ে রয়েছেন মানুষ। যার ফলে ক্ষতি হয়েছে পর্যটন ব্যবসাতেও। মানুষ যেন সাহস করে বাড়ির বাইরে বেরোতে চাইছেন না, এমনকী বাইরে থেকে কেউ আসতেও চাইছেন না। আজমেরের এক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ওই ঘটনার পর থেকে অতিথি আসা প্রায় বন্ধ। অথচ দিন কয়েক আগে পর্যন্ত ওই হোটেল থেকে ভালোই রুজি-রোজগার হত তাঁদের। উদয়পুরের ঘটনা এবং খাদিম চিস্তির মন্তব্য যেন তাঁদের ব্যবসায় শনি হয়ে দেখা দিয়েছে। হোটেলের বেশিরভাগ ঘরই ইদানীং খালি। যাঁদের বুকিং ছিল, তাঁরাও সেসব বাতিল করে দিচ্ছেন।
আরও শুনুন: ৬০ বছর ধরে তীর্থযাত্রীদের করিয়েছেন অমরনাথ দর্শন, এখনও মন্ত্রপাঠ করেন বৃদ্ধ গুলাম নবি
অশান্তির জেরে সব মিলিয়ে অন্তত ৫০ কোটি টাকা ব্যবসার লোকসান হয়েছে। এমনটাই দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। বেসরকারি যানবাহনের কথা দূরে থাক, বাসে পর্যন্ত লোক উঠছে না। ফাঁকাই চলছে বেশিরভাগ বাস। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি মোটেও সুখের নয়। এই সব অশান্তির জেরে কমেছে ভক্তদের ভিড়ও। ধর্মস্থান থেকে শুরু করে ফুটবল মাঠ, সব জায়গাতেই যেন এক অদ্ভুত শূন্যতা।
অথচ ইদের বাজারে এমনটা হওয়ার কথা নয় বলেই মত স্থানীয় বিক্রেতাদের। করোনা-ফাঁড়া কাটিয়ে এ-বছর একটু লাভের মুখ দেখবেন বলেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সাম্প্রদায়িক অশান্তি আর বিতর্কিত মন্তব্যের জের তাঁদের সেই আশায় জল ঢেলেছে পুরোপুরি। আর সেই ক্ষোভ ফুটে উঠেছে এলাকার ছোটবড় সমস্ত ব্যবসায়ীদের মুখেই।