আর জি করের নারকীয় কাণ্ড আরও একবার সামনে এনে দিয়েছে নারীদের সামগ্রিক বিপন্নতাকে। সেই আবহেই উঠছে মেয়েদের আত্মরক্ষার উপায় শেখার কথাও। এই একই কথা বলেছিলেন খোদ রবীন্দ্রনাথও। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ঘরে হোক কি বাইরে, মেয়েদের বিপন্নতার ছবিটি বারেবারে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সম্প্রতি নিজের কর্মক্ষেত্রেই যেভাবে ধর্ষণ-খুনের শিকার হলেন চিকিৎসক তরুণী, সে ঘটনা সেই ভয়কে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন প্রত্যেকটি ঘটনার পরেই বিচারের দাবি ওঠে, আবার বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় ক্রমে ক্রমে ক্লান্তি আসে। প্রশাসন থেকে সহনাগরিক, সকলের উপর থেকে আস্থা হারাতে হারাতে মেয়েরা মনে করতে থাকেন, তাঁদের নিজেদেরই নিজেদেরকে বাঁচাতে হবে। অন্য কেউ যখন সে দায় পালন করতে পারছে না, তখন আত্মরক্ষার উপায়গুলি আত্মস্থ করে নিতে হবে ক্রমশ। এই পরিস্থিতিতেই বারেবারে উঠে আসে মেয়েদের কারাটে কিংবা মার্শাল আর্ট শেখানোর দাবি। জানা যায়, আজ থেকে প্রায় শ-খানেক বছর আগে দাঁড়িয়েও, একই কথার সপক্ষে সায় দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথও। তিনিও চেয়েছিলেন, আত্মরক্ষার জন্য সবল হোক মেয়েরা।
আরও শুনুন:
দল বা কোন্দল নয়, ভয় না পাওয়াই রাজনৈতিক
কবি মানেই কেবল আশমানদারিতে ভেসে যাবেন তিনি, এমনটা তো কোনও দিনই মনে করেননি রবীন্দ্রনাথ। বরং পারিপার্শ্বিকের সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বরাবর সচেতন দৃষ্টিতে খুঁটিয়ে, খতিয়ে দেখেছেন তিনি। তাঁর দূরদর্শিতা এখনও পথ দেখায় আমাদের। সেই রবীন্দ্রনাথই উৎসাহী হয়েছিলেন যুযুৎসু নিয়ে। এই বিদ্যা যাতে মেয়েরাও শিখতে পারে, সে কথাও ভেবেছিলেন তিনি। আর সে প্রসঙ্গেই উঠে এসেছিল মেয়েদের আত্মরক্ষার কথা।
সালটা ১৯২৯, রবীন্দ্রনাথ তখন জাপানে। জাপান থেকেই পুত্র রথীন্দ্রনাথকে চিঠিতে লিখছেন, “এই বিদ্যাটা আমাদের মেয়েদের শেখা উচিত, যদি ভাল শিক্ষক পাওয়া যায় তো চেষ্টা করা উচিত। আমাদের দেশে আজকালকার দিনে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্যে এর খুব দরকার।” সেই বছরেই জাপান থেকে যুযুৎসু শিক্ষক তাকাগাকি-কে শান্তিনিকেতনে আনা হল। তাকাগাকি আসার পর তাঁর কাছে শুধু ছেলেরা নয়, মেয়েরাও যুযুৎসু শিখতে শুরু করল। অমিতা সেন জানিয়েছেন ‘…শক্তি সঞ্চয় করে চরিত্রে থাকবে সংযম, থাকবে বিনয়—এই শুভ কামনা করে তিনি গান রচনা করলেন— “সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান।” যুযুৎসু ড্রিল করবার সময়ে আমরা এই গানটি গাইতাম।’
আরও শুনুন:
কাঁদছেন মা দুর্গা, তবু বধ তিন অসুরকে… খুদে শিল্পীর ভাবনা ভাবাচ্ছে সময়কে
এই ১৯২৯ সালেই ‘যোগাযোগ’ উপন্যাস লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। যেখানে দাদা বিপ্রদাসের কাছে বন্দুক চালাতে শিখেছে কুমু। নারীকে কেবল সমাজের বেঁধে দেওয়া ‘মেয়েলি’ ছকেই বাঁধা পড়তে হবে, ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল রবীন্দ্রনাথকে সে কথা বলেনি। আর সেই শিক্ষাকেই নিজের বোধে আরও বিস্তৃত করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি মেয়েদের আত্মরক্ষার প্রয়োজন মাথায় রেখেও মেয়েদের শারীরিক বলের প্রতি জোর দিতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।